সপ্তাহজুড়ে পুঁজিবাজারে মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, কাটছে না আতঙ্ক
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই মূল্য সূচক বেড়েছে। এরপরও সপ্তাহজুড়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার থেকে বেশি কোম্পানি দাম কমেছে। বেশি কোম্পানির দাম কমলেও বেড়েছে বাজার মূলধন। সেই সঙ্গে বেড়েছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ। তবে বছরের শুরু থেকে ফের দরপতন শুরু হয়। ফলে বছরের শুরুতে দরপতনে নতুন করে আস্থা সংকটে বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিলো বছরের শুরুতে পুঁজিবাজার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবো।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। কারণ দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস অতিবাহিত হলেও এখন আস্থা ফেরাতে পারেনি পুঁজিবাজার। বরং দিন দিন বিনিয়োগকারী কমেছে পুঁজিবাজারে। মুলত গত ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন রাশেদ মাকসুদ। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা।
এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। তেমনি বিএসইসি এখন পর্যন্ত এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। অন্যদিকে কোন বিনিয়োগকারী বেশী পরিমাণ শেয়ার কিনলেই বিএসইসি থেকে ফোন দিয়ে কারণ জানতে চাওয়া হয়।
এছাড়া গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যোগ্য নেতৃত্বে দেশের অর্থবাজার অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও সংকট থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। তবে মাঝে মধ্যে সূচকের উকি মারলেও আস্থা ফিরছে না পুঁজিবাজারে। কারণ গত দুই বছরের টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ। এ অবস্থায় আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর বিনিয়োগকারীদের আশা ছিলো বাজার ভাল হবে। তবে ভাল তো দুরের কথা। পুঁজিবাজারের গত পাঁচ মাসের দরপতনে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়লেও সিএসইতে কমেছে। একই সঙ্গে বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসই ও সিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৭৮০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫.১৭ পয়েন্ট বা ০.২৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩.৬৯ পয়েন্ট বা ০.১৯ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৩০ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১.৫৪ পয়েন্ট বা ০.৯৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৫৫ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১৯.৩৯ পয়েন্ট বা ১.৭৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১১০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ১৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৭৯০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৪টির, কমেছে ১৮২টির ও অপরিবর্তিত আছে ৫০টির। তবে, লেনদেন হয়নি ১৭টি কোম্পানির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৬.৮৫ পয়েন্ট বা ০.৮০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৫২ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.৮৮ শতাংশ বেড়ে ১২ হাজার ৯২ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স ০.৭৪ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৩২ শতাংশ বেড়ে ৯৩২ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ১.৭০ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৮০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৩ কোটি ৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৯৯০ কোটি ৮ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩৮৮ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ২২০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ২৮১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১২৭টির, কমেছে ১২৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৩০টির।