মন্দা পুঁজিবাজারে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড
আবদুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে দরপতন পুঁজিবাজারে নতুন করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রকৌশল খাতের পচা দুর্বল মৌল ভিত্তি কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছে লেনদেন ও মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা এ কোম্পানিটি। কারণ, এসব কোম্পানি দুর্বল মানের, অথচ বেশ কিছুদিন ধরে তাদের শেয়ারেরই দাপট চলছে। অর্থাৎ মন্দা বাজারেও এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দরপতন ঘটছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের মত দুর্বল কোম্পানি দুর্গন্ধ ছড়িয়ে বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করছে। ফলে ভালো বিনিয়োগকারীরা এখানে আসছে না। তাদের মতে, একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে। এর ফাঁদে পা দিচ্ছে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী ইতিমধ্যে নি:স্ব হয়েছেন।
নতুন করে বিনিয়োগকারীদের ফাঁদে ফেলে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছেন। ফলে ওই চক্রটি বাজার থেকে বের হয়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা ফের পথে বসবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারা এসব কোম্পানির শেয়ার কিনছে, তা খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে গত সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি। এমন বাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে ‘পচা’ বা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারা কয়েকটি কোম্পানি। ফলে সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টিই ‘জেড’ গ্রুপের। এর মধ্যে শীর্ষ তিনটি স্থানই জেডের দখলে রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে না পারায় জেড গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলো দাপট দেখানোর সপ্তাহে সব থেকে বড় দাপট দেখিয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। ২০২০ সালের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারা এই কোম্পানিটি গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের কাছে আগ্রহের শীর্ষে চলে আসে।
এতে একদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের ক্রেতা বেড়ে যায়, অন্যদিকে শেয়ার বিক্রির চাপ কমে যায়। ফলে সপ্তাহজুড়েই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে। এমনকি প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটিও দখল করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত সপ্তাহজুড়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড’র শেয়ার দাম বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২ টাকা ৮০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে সম্মিলিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৫৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৯ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ৬ টাকা ৪০ পয়সা।
শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ও আড়াই শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। তার আগে ২০১৯ সালে ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০১৮ সালে ২০ শতাংশ বোনাস শেয়ার, ২০১৭ সালে ৩ শতাংশ নগদ ও ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রতিবছর বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে কোম্পানিটি শেয়ার সংখ্যা বাড়িয়েছে। তবে ২০২০ সালের পর বিনিয়োগকারীদের আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
২৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৫২ লাখ ৩ হাজার ৭৬৯টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৩১ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে এবং ১৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে।