শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে টানা দরপতন কিছুতেই থামছে না। দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজারে পতনের মাত্রা তত বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে বেড়েই চলেছে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার। এছাড়া নতুন বছরের শুরু থেকে তিন কার্যদিবস দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন দেখা গেলেও এখন টানা দরপতন চলছে।

বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার দরপতন ঠেকাতে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ফলে ক্ষোভ আর হতাশা বাড়ছে মাকসুদ কমিশনের উপর। মুনাফার আশায় এসে সর্বস্বান্ত হয়েছেন এমনটিই যেন বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নিয়তি। মাঝেমধ্যে কিছুটা সূচকের ওঠানামা থাকলেও হতাশা যেন এখানকার নিত্যদিনের চিত্র। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির এবং বিদেশী সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা হতাশ এখানে বিনিয়োগ করে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কারসাজির মাধ্যমে একটি পক্ষ মুনাফা করে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের একটি শ্রেণিও সুবিধা পায়। যদিও ওই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অন্য একটি অংশ লোকসানে পড়ে যায়। বিগত সরকারের সুবিধাভোগী পক্ষরা সুবিধা নিয়ে পুঁজিবাজার থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু এখন তারা নেই। তাই সাধারণ মানুষের মনে এখন কারা পুঁজিবাজার নিয়ে কারসাজি করছে। ঐ সিন্ডিকেট চক্র এখন বাজারে নেই। তা হলে কারসাজি করছে কারা।

এছাড়া পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসেছে, এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। লোকসানের পরিমাণ এত বেড়েছে যে কিছু লোকসান দিয়ে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যাবেন, সে চিন্তাও ছেড়ে দিয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আশাবাদী হয়ে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তারাও লোকসানে।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের সভাপতি আ না ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর না থাকলে বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। ৫ আগস্টের পর পুঁজিবাজারের জন্য যে খবরগুলো এসেছে তার মধ্যে আইসিবিকে দেওয়া হয়েছে স্বল্প সুদে ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এই টাকা কীভাবে বিনিয়োগ করা হবে তার কোনো দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বিএসইসির পক্ষ থেকে কমিশন সভার মাধ্যমে একের পর জরিমানার খরব এলেও নতুন কোনো কোম্পানি অনুমোদন দেওয়া হয়নি গত চার মাসে। ফলে বিনিয়োগকারীরা নতুন কোম্পানি পায়নি বিনিয়োগের। এ ছাড়া কমিশনের পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৬৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯১৯ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭৩ টির, দর কমেছে ২৭০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪ টির। ডিএসইতে ৩১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৬০ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯২ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৭ টির এবং ২১ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৩ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।