আলমগীর হোসেন ও শহীদুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: স্মরণকালের সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে দেশের পুঁজিবাজার। ব্যাপক সম্ভাবনাময় খাতটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। সবার চোখের সামনে হাওয়ায় মিশে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজার মূলধন। আতঙ্কে দিন কাটছে বিনিয়োগকারীদের। ফলে গত বছর দরপতন আর হতাশায় বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। তাদের পিঠ রীতিমতো দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এর মধ্যেই রাশেদ মাকসুদ কমিশনের পাঁচ মাসে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর পুঁজি হারিয়ে বাজার বিমুখ হয়ে পড়ছেন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ।

যদিও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও অর্থ উপদেষ্টা ইতিবাচক বক্তব্য দিলেও তাতে বিশেষ কোনো ফল লাভ হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীসহ বাজার মধ্যস্থতাকারীদের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নেতৃত্বের পরিবর্তনের প্রত্যাশা বা দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গত রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌদি-বাংলাদেশের বিনিয়োগ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। তবে অর্থ উপদেষ্টার এমন ইঙ্গিতের পরই সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থান হয়েছে।

গত রোববার অর্থ উপদেষ্টা এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে বলেন, পুঁজিবাজারে অনেক কোম্পানি বিনিয়োগ করছে। কিন্তু অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও তাদের দাম বাড়ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে কেউই ভালো নেই। অথচ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পূণ:গঠনের আগে পুঁজিবাজারে অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। যা পরবর্তীতে বিএসইসিতে যোগ্য লোকের অভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি।

এ অবস্থায় চলমান দরপতনে বিনিয়োগকারীদের যেমন মাথায় হাত, তার চেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় ব্রোকারেজ হাউজগুলো। লেনদেন খরায় লোকসানে অসংখ্য ব্রোকারেজ হাউজ বন্ধের পথে। আর প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বন্ধ রেখে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর আয়ের পথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ এক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, রাশেদ মাকসুদ কমিশন পুঁজিবাজার ইস্যুতে একজন অদক্ষ লোক। ফলে বিএসইসি বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ কমিশন দিয়ে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব না। এটাতো আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি।  একজন সাধারন বিনিয়োগকারীও এই কমিশনকে যোগ্য মনে করেন না। তাদের যোগ্যতার অভাব নিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ-মিছিলও হয়েছে। অবশেষে উপদেষ্টা সবার ভালোর জন্য বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সেটা অনেক সুখবর। যা বাস্তবায়নে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সূত্র মতে, তবে নতুন বছরের প্রথম চার কার্যদিবসের মধ্যে প্রথম কার্যদিবস নামেমাত্র সূচকের ইতিবাচক থাকলেও এর পর শুরু হয় টানা দরপতন। তবে বছরের চতুর্থ কার্যদিবস অর্থাৎ সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সূচকের উত্থান হলেও নতুন বছরে যেখান থেকে বাজার শুরু হয়েছিল, সেখানে ফিরতে সূচক আরও ১৮ পয়েন্ট বৃদ্ধি প্রয়োজন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছরের প্রথম কার্যদিবস দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচক বেড়েছিল ২ পয়েন্ট। দ্বিতীয় কার্যদিবসে ১৯ পয়েন্ট সূচক কমেছিল এরপর তৃতীয় কার্যদিবসে ৩৪ পয়েন্ট সূচকের উধাও হয়েছে। আজ বছরের চতুর্থ কার্যদিবসে অথাৎ সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ডিএসইর সূচক বেড়েছে ৩৩ পয়েন্ট। এতে দেখা যায়, বছরের প্রথম কার্যদিবসে সূচকে ফিরতে আরও ১৮ পয়েন্ট প্রয়োজন। আর মূলধন বাড়তে হবে ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৯৮ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৩৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৮ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৩ টির, দর কমেছে ১০১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৪ টির। ডিএসইতে ৩৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৬৬ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১২ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৭ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৯৩ টির এবং ৩২ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।