এনআরবিসি ব্যাংকের লুটেরাদের সহযোগী খন্দকার রাশেদ মাকসুদ তদন্তে দুদক
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও এখনো তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন। একজন দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তির মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ পুঁজিবাজারে কিভাবে সংস্কার করবেন তা নিয়ে পুঁজিবাজারে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠছে দুর্নীতির অভিযোগের পরও (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কী ভাবে দায়িত্ব পালন করে।
মুলত বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনকালে রাশেদ মাকসুদ বড় অংকের ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে রাশেদ মাকসুদ গ্রাহককে অবৈধভাবে বিশাল অংকের ঋণ দিয়েছিলো। ব্যাংকটির গ্রাহক এ এন্ড আউট ওয়্যার লিমিটেড ও নর্ম আউট লিমিটেড এবং কোল্ড প্রে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীনকে অবৈধভাবে ২৬৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন। যা দুদক তদন্ত করছে। তবে এটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া এই লুটেরা চক্র। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে। দুদক চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয় এ বিষয়ে তদন্ত করছে। দুদক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুদুক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন মাসের ১১ তারিখে দুদুকের চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এবিষয়ে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি খন্দকার রাসেদ মাকসুদসহ আরো ৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি অনুসন্ধান শুরু হয়। অনুসন্ধানের স্মারকে বলা হয়, এ এন্ড আউট ওয়্যার লিমিটেড ও নর্ম আউট লিমিটেড এবং কোল্ড প্রে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীনকে অবৈধভাবে ২৬৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন রাশেদ মাকসুদ চক্র। তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী টিমের প্রধান মো. আতিকুল আলম বলেন, এবিষয়ে মামলা হয়েছে। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে।
এবিষয়ে মন্তব্য জানতে খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। বরং তিনি গনমাধ্যমে শুরু থেকে এগিয়ে চলছেন। ফলে এমন একজন ব্যক্তিকে দেশের আরও বড় দায়িত্ব তথা পুরো পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে হাজার খানেক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সরাসরি জড়িত। যিনি বিএসইসিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্রমান্বয়ে তলানির দিকে। অথচ আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পরে ও মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পূণ:গঠনের আগে পুঁজিবাজারে অনেক ভালো হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। যা পরবর্তীতে বিএসইসিতে যোগ্য লোকের অভাবে সম্ভব হয়ে উঠেনি।
তবে সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এতে করে কিছুটা আশাবাদি হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে বিএসইসি চেয়ারম্যানের ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টা কোন ভুমিকা না নেওয়ায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। এদিকে পারভেজ তমালরা এনআরবিসি ব্যাংক দখলের পরপর ২০১৮ সালের এপ্রিলে রাশেদ মাকসুদ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি দুর্নীতির মাফিয়া সিন্ডিকেট তমাল-আরজু-আদনানের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হন।
এ বিষয় জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় নৈতিকভাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এরপরও রাশেদ মাকসুদ যেহেতু দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে সেহেতু অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিৎ এখনই তদন্ত করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া।
নাম গোপন রাখার শর্তে ডিএসই ও ডিবিএর দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি বলেন, একজন দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তির মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ পুঁজিবাজারে কিভাবে সংস্কার করবেন তা আমাদের বুঝে আসে না। এত বড় একটি স্পর্শকাতর জায়গায় দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার কিভাবে এবং কার স্বার্থে নিয়োগ দিলো সেটা খুঁজে বের করা উচিৎ। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
একজন অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যক্তির দ্বারা এ বাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। আমরা যেটা শুনেছি বর্তমান বিএসইসির চেয়ারম্যান অর্থ উপদেষ্টার আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠজন তাই এই বাজারের স্টেকহোল্ডার থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবাই চেয়ারম্যানের পদত্যাগ চাওয়ার পরেও রাশেদ মাকসুদ স্বপদে বহাল রয়েছে। রাশেদ মাকসুদের কর্মকান্ড অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করছে তা অর্থ উপদেষ্টা কেনো দেখেন না।
সূত্র মতে, এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের মালিকানা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের তিন শীর্ষ পদধারীর জানা স্বত্ত্বেও, এসময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে থাকা রাশেদ মাকসুদ একচেটিয়া ব্যাংকের সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, সরঞ্জামাদি ক্রয়, শাখা-উপশাখার ডেকোরেশন ও গাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন সেবা সরবরাহের কার্যাদেশ এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের অনুকূলে প্রদান করেন।
তাছাড়া, শুধুমাত্র লুটপাটের উদ্দ্যেশ্যেই রাশেদ মাকসুদের অনুমোদনে ব্যাংকের কর্মকর্তা ল্যাফটেনেন্ট কমান্ডার (অবঃ) ফরহাদ সরকারকে ব্যাংকের চাকুরীতে থাকা অবস্থায় পরিচালকদের মালিকানাধীন এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের এমডি ও সিইও হিসেবে ডেপুটেশনে পদায়ন করা হয়। যা ব্যাংকের সম্পূর্ণ স্বার্থবিরোধী কাজ। এভাবেই ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্থ পরিচালকদের যোগসাজশে শতকোটি টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেছেন রাশেদ মাকসুদ। এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির বিতর্কিত চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ব্যাংক দখলের সাথে সাথেই ২০১৮ সালের এপ্রিলে রাশেদ মাকসুদ ব্যাংকটির এমডি হিসেবে যোগদান করেন এবং দুর্নীতির মাফিয়ার প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৭৮তম বোর্ড মিটিংয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাকসুদের সুপারিশে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের অনুকূলে ৬০ কোটি টাকার কম্পোজিট ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে ২০ কোটি টাকার অমনিবাস ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি ও ৪০ কোটি টাকার লিজ ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি অন্তর্ভূক্ত ছিলো। আইন অনুযায়ী, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ১৮ (৬) ধারা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী জারিকৃত ‘ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে লেনদেন সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান’ সংক্রান্ত বিআরপিডি ৪নং সার্কুলারের পরিপন্থী। সেখানে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং এনআরবিসি ব্যাংক তাদের একমাত্র সেবা গ্রহিতা বা গ্রাহক। ফলে এনআরবিসি ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান ও এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান একই ব্যক্তি হওয়ায় এবং পরিচালকেরা উভয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকায়, লোন অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।
সূত্র জানায়, ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল ও তার পিতা শাহজাহানের বেনামী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লান্তা সার্ভিসেসের নামে পূর্বের ৩ কোটি টাকার বেনামী লোন নিয়ে বোর্ডের আপত্তি ও উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষন থাকা স্বত্ত্বেও গত ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ৭৮তম পর্ষদ সভায় রাশেদ মাকসুদের সুপারিশে লান্তা সার্ভিসেসের নামে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কম্পোজিট ক্রেডিট লিমিট প্রদান করা হয়। এই লোন প্রপোজাল অনুমোদনের সময় এই প্রতিষ্ঠানের সাথে তমাল পারভেজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোন ডিক্লারেশন দেয়া হয়নি। এই লোনের বিপরীতে কোন সহায়ক জামানতও নেয়া হয়নি। তাছাড়া পারভেজ তমাল সেই বোর্ড সভায় নিজে উপস্থিতও ছিলেন। তবে পরবর্তী পর্ষদ সভায় কম্পোজিট ক্রেডিট লিমিট সাড়ে ৪ কোটি থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে ৬ কোটি করা হয়।
পরবর্তীতে ব্যাংকের ৮২তম পর্ষদ সভার ৩৭তম এজেন্ডা অনুসারে লান্তা সার্ভিসেস লিমিটেডের নামে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার হায়ার পারচেজ লোন অনুমোদন হয়। হায়ার পারচেজ লোনটি ‘মেমো থ্রু সার্কুলেশনের’ মাধ্যমে বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদন দেয়া হয় অথচ এই লোনটি সার্কুলেশন মেমো হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় মত জরুরী ছিলো না। এই লোনের বিপরীতে গ্রাহক থেকে কোন প্রকার ইকুইটিও নেয়া হয় নাই। শুধুমাত্র চেয়ারম্যানের স্বার্থসিংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবেই লান্তা সার্ভিস এই বিশেষ সুবিধা ভোগ করে। লানতা সার্ভিসেস লিমিটেডের বনানী শাখার একাউন্ট নং ৃ.০০৩৫০ পর্যালোচনা করে পাওয়া যায়, ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার হায়ার পারচেজ লোনটি ঐ বছরের ০৩ জুন বিতরণ করা হয় এবং পে-অর্ডার নং ৬৯৬৬৯৯ এর মাধ্যমে এজি অটোমোবাইলসকে এই অর্থ প্রদান করা হয়।
এছাড়াও, রাশেদ মাকসুদ ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন গত ২০১৯ সালের ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত ৮৪তম পর্ষদ সভার ৪৩তম এজেন্ডার মাধ্যমে ল্যান্ড রোভার গাড়ী ক্রয়ের জন্য ২ কোটি ৪২ লাখ টাকার হায়ার পারচেজ লোন অনুমোদন দেয়া হয়। গ্রাহক গাড়ীর মূল্যের মাত্র ১৫ শতাংশ ইকুইটি হিসেবে দেয়ার অনুমতি পায়। এভাবে পর্ষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক ব্যাংকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদনের মাধ্যমে অস্বাভাবিক সুবিধা দেয়া ক্রেডিট নর্মসের পরিপন্থী।
রাশেদ মাকসুদ ব্যাংকটির এমডি থাকাকালীন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ব্যাংকের ৭৮তম পর্ষদ সভায় পাবনার রুপপুর শাখার গ্রাহক পাপারোম্রা নামে ৫ কোটি টাকার ওভারড্রাফট ঋণ অনুমোদন করেন। ঋনের অর্থে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন ১৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি পাপারোমার মালিকানায় ক্রয় করা হয়। কিন্তু ঋণ অনুমোদন ও জমি ক্রয়ের পূর্বেই ঋণের সহায়ক জামানত হিসেবে উপরোল্লিখিত ১৭৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমিকেই দেখানো হয়।
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ঋনের আবেদনে ভুল তথ্য প্রদান ও ঋণের টাকা ছাড় করে সহায়ক জামানত ক্রয় সম্পূর্ণ বে-আইনী ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাছাড়া, এই ঋন অমুনোদনের ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পলিসিকেও সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি এন্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিভিশনের ২০২২ সালের ২৪ মে থেকে ২৮ এপ্রিল এবং ১০ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সর্বমোট ১৫ কার্যদিবস পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শনে পাপারোমার ঋনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হয়। কিন্তু তমাল-আর্জু-আদনানের সাথে সখ্যতার কারনে সেসময়ের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবীরের নির্দেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাকসুদসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
তাছাড়া, রাশেদ মাকসুদ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালীন ব্যাংকের নতুন শাখা উপশাখার ডেকোরেশনের জন্য তমাল-আর্জু-আদনানের মালিকানাধীন এনআরবিসি ম্যানেজমেন্ট ও লান্তা সার্ভিসেসকে একচেটিয়া কাজ কার্যাদেশ প্রদান করেছেন এবং সন্তোষজনক কারন ছাড়াই কার্যাদেশের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করেছেন।
ব্যাংকের অনুষ্ঠিত ৭৪ তম পর্ষদ সভার ৫১তম এজেন্ডায় উল্লেখ করা হয়েছে, নেত্রোকোনার পূর্বধলা শাখার ডেকোরেশনের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান টেন্ডার আবেদন করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে অর্চিকন্স, লান্তা ফরচুনা প্রোপারটিস লিমিটেড এবং আদ্রিতা ট্রেডিং। টেন্ডারে অর্চিকন্স সর্বনিম্ন দর দিলেও পরে তারা এই দামে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় কাজটি লান্তা ফরচুনা প্রপারটিজকে দেয়া হয় এবং গুণমান সম্পন্ন কাজ করার জন্য টেন্ডার প্রাইজের চেয়ে ১০ শতাংশ দাম বেশী ধরে কাজের মূল্য নির্ধারন করা হয়।
পরবর্তীতে ৮২তম পর্ষদ সভার ৪২, ৪৩, ৪৪ ও ৪৬তম এজেন্ডার মাধ্যমে মাদারগঞ্জ, রাজবাড়ী, রামপুরা, বরগুনা শাখার ডেকোরেশনের কাজ ও ৫৪তম এজেন্ডার মাধ্যমে বিভিন্ন শাখায় ফার্নিচার সরবরাহের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আর ৮৪তম পর্ষদ সভার ৩০তম এজেন্ডার মাধ্যমে বরগুনা শাখা ও রাজবাড়ী শাখার ডেকোরেশনের কার্যাদেশের মূল্য বৃদ্ধি করে লান্তা সার্ভিসেসে পক্ষে অনুমোদন করা হয়। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকের এমডি থাকাকালীন রাশেদ মাকসুদ কর্তৃক যাচাইবাছাই ব্যতীত শুধুমাত্র স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকের আভ্যন্তরীন নিরীক্ষা দলের বিভিন্ন অনুসন্ধানী রিপোর্টে ব্যাংকের উত্তরা শাখার তৈরী পোশাকের গ্রাহকসহ বিভিন্ন শাখা থেকে দুর্বল গ্রাহকদের অনুকূলে নিয়ম বহির্ভূত ঋণ প্রদানের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।