স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না। বরং দিনের পর দিন টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিনিয়োগকারীরা। তবুও টনক নড়ছে না অর্থ উপদেষ্টার। মুলত ২০১০ সালের ধসের ১৫ বছর পরও বিনিয়োগকারীর কাছে এখনো আস্থাহীন দেশের পুঁজিবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন বিনিয়োগের বাজার নয় বরং পুঁজি হারানোর বাজার। ভালো-মন্দ বেশির ভাগ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও লাভের দেখা মিলছে না। তাই বাজারে আসতে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক খাতে প্রত্যাশা দেখালে পুঁজিবাজার ইস্যুতে কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। বরং বিনিয়োকারীরা আগের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুলত খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশন দীর্ঘ ৫ মাস অতিবাহিত হলেও কার্যকরী কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং নতুন নতুন যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেটা নিয়ে সমালোচনায়ই বেশি হয়েছে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফিরছে না পুঁজিবাজারে।

এদিকে শুরু হয়েছে নতুন বছর আশা নিয়ে বুক বেধে ছিলো বিনিয়োগকারীরা। নতুন বছরে হয়তো ঘুরে দাড়াবে পুঁজিবাজার। কিন্তু সেই আাশা শুধু আশায় রয়ে গেলো। নতুন বছর শুরু হয়েছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর মধ্য দিয়ে। কিছুতেই যেন স্থিতিশীলতায় ফিরছে না পুঁজিবাজার। কোন উদ্যোগেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। দীর্ঘদিন থেকে ধৈর্য্য ধরে আস্থার প্রতিফল পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।

ফলে হতাশায় দিন গুনছে বিনিয়োগকারীরা। আর স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকারসহ সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থায় পুঁজিবাজারের সংকট নিরসনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ স্টক হোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন এমন খবরে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছিল। এরপর বিকাল থেকে কয়েকটি নিউজ পোর্টালে খবর প্রকাশিত হয়, পুঁজিবাজারের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে এমন খবরে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস দেশের প্রধান দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় উত্থান হলেও দিনশেষে সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।

মুলত এদিন লেনদেনের প্রথম ভাগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ৪৩ পয়েন্টের বেশি সূচক বাড়লেও দুপুরের দিকে বৈঠক সূত্রে খবর আসে বিএসইসি চেয়ারম্যানের ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টা কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমন খবরে বিনিয়োগকারীরা আশাহত হওয়ায় বাজার বড় উত্থান থেকে পতনে হয়েছে বলে একাধিক বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করেন।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা বৈঠক চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন মাধ্যমকে জানাতে থাকেন যে, বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানকে সরানোর এবং বাজারকে সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এমন খবরে বেলা ১টার পর চাঙ্গাবাজার পেছনে ছুঁটতে থাকে। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে দেখা যায়, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক যেখানে ৪৩ পয়েন্টের বেশি উত্থানে ছিল, সেখানে সূচক ৮ পয়েন্টের বেশি পতন হয়েছে।

দিনের প্রথম ভাগে যেখানে ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল, সেখানে দিনশেষে উত্থান ও পতনের পরিমাণ সমানে সমান অবস্থান করছে। ফলে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৯০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯২২ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২ টির, দর কমেছে ১৬৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭৩ টির। ডিএসইতে ৪২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৬৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৬২ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫০২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৬ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১৫ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৬১ টির এবং ৩০ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।