ট্রাস্ট লাইফ ইন্সুরেন্সের তৃতীয় প্রান্তিকের তথ্য গোপন কার স্বার্থে!
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন রাখার অভিযোগ উঠেছে ডিএসইর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কোম্পানিটির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে বিলম্ব করার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ কোম্পানি এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন বিনিয়োগকারীরা। বিষয়টি কোম্পানি ও ডিএসই থেকে গোপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। এদিকে কোম্পানি থেকে দায়ভার চাপানো হচ্ছে ডিএসইর ওপর। আর এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি স্টক এক্সচেঞ্জটি।
সূত্র মতে, তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড গত ৩০ সেপ্টেম্বর,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের নিরীক্ষা শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি কমিশন এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে জমা দেন। গত ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং ডিএসই কোম্পানি থেকে পাঠানো এ প্রতিবেদন গ্রহণ করেন।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবেদন গ্রহণের পর দিন তা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশের নিয়ম থাকলেও তা গোপন রাখে ডিএসইর কর্মকর্তারা। দীর্ঘ ১৮ দিন পর অর্থাৎ ১৯ নভেম্বর তা ডিএসইতে প্রকাশ করা হয়। এতে শেয়ারটি নিয়ে কারসাজিকারীদের জন্য ডিএসইর কর্মকর্তারা হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, গত ৩১ অক্টোবর ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ থেকে নিরীক্ষা শেষে অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পাঠানো পরেও ডিএসই তা প্রকাশ না করে গোপন করেছে। এই সময়ের মধ্যে শেয়ারটির দর প্রায় ১০ টাকা বৃদ্ধি পায়। গত ৩১ অক্টোবর শেয়ারটির দর ছিলো ২৯ টাকা ৬০ পয়সা। আর ১৯ নভেম্বর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের দিন শেয়ারদর বেড়ে দাড়ায় ৩৯ টাকা ২০ পয়সায়। অর্থাৎ মাত্র ১২ কার্যদিবসে শেয়ারটির দর বেড়ে দাড়ায় ৯ টাকা ৬০ পয়সা। এদিন কোম্পানির শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ দামে উঠে হল্টেড হয়।
ডিএসইর কর্মকর্তারা সরাসরি শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের দাবি, তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির তথ্য সবার আগে ডিএসইর কর্মকর্তাদের নিকট আসে। তবে তাঁরা নিজেদের স্বার্থ হাসিল ও কারসাজিকারীদের সম্পৃক্ততায় তা প্রকাশে দেরি করে। ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ডিএসই হাতে পাওয়ার পরেও ১৮দিন গোপন রাখে। এর মধ্যে শেয়ারটি কম দামে ক্রয় করে কারসাজিকারী ও জড়িত কর্মকর্তারা। পরে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে কোম্পানি সম্পর্কে ভালো ধারণা দিয়ে বেশি দরে সাধারণ বিনিয়োগারীদের ধরিয়ে দেয় তাঁরা। এতে ন্যায্যমূল্যের থেকে বেশি ধরে বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফা লুটে নেয়। ফলে এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সহ সকল তথ্য সবার আগে কমিশন এবং স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে যায়। সে অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের করনীয় দ্রুততার সাথে তা প্রকাশ করে বিনিয়োগকারীদের জানানো। তবে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দীর্ঘদিন গোপন রাখাতে কারসাজির হাত থাকতে পারে। ১৮ দিন গোপন রাখার পর প্রান্তিক প্রকাশের দিন শেয়ারটি বেশি দামে ধরিয়ে দেওয়াতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
এদিকে একের পর এক ভুল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব আর তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকা নিয়ে বছরজুড়ে বিতর্কের শীর্ষে থাকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এবার আরেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তালিকাভুক্ত কোম্পানি ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য গোপন রাখার অভিযোগ উঠেছে ডিএসইর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
কোম্পানিটির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে বিলম্ব করার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের সহায়তা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর পূর্বে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়েও গাফিলতি দেখা গেছে ডিএসইর কর্মকর্তাদের। পরবর্তীতে একাধিক অনলাইন পোর্টাল ও প্রিন্টিং ভার্সনে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে ডিএসইর কর্তাদের। একই সঙ্গে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের ক্যাটাগরি পরিবর্তন নিয়েও ডিএসইর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ডিএসইর ভিতরে যে অনিয়ম হচ্ছে, অতীতে ডিএসইর অভ্যন্তরীন অডিট কমিটি সে জায়গায় কোনো কার্যকরী ভুমিকা রাখেনি। শুধু বিএসইসি থেকে কোনো শোকজ করা হলে তা উত্তর দেওয়া হতো। আমরা যেটা এখন করছি অভিযোগ পেলে অভ্যন্তরীন অডিট কমিটির অডিটে তা প্রমাণিত হলে সে ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স।