বিক্রির চাপ না কমলে পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকানো সম্ভব না, নতুন বিনিয়োগের দাবী
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কিছুতেই স্থিতিশীলতায় ফিরছে না দেশের পুঁজিবাজারে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে কোন উদ্যোগেই দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। আশার প্রতিফলন পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। তেমনি এক দিন সূচক বাড়লে চার দিন দরপতন ঘটে। এ ভাবে বছরের পর বছর পার করছে বিনিয়োগকারীরা। তবে বছরের শুরুতে বাজার স্থিতিশীল হবে এমন প্রত্যাশা ছিলো বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সাথে মিল নেই বিনিয়োগকারীদের।
এছাড়া টানা দরপতন ঘটলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব ভুমিকা পালন করছেন। আর টানা দরপতন ঘটলেও ডিএসই কোন মুখ খুলছে না। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান রাশেদ মাকসুদ কমিশন পুঁজিবাজার ইস্যুতে অদক্ষ। পুঁজিবাজার কী ভাবে স্থিতিশীল রাখবে এ ধারনা নেই তার। এ কমিশনের কাজ হচ্ছে শুধু জরিমানা করা। ফলে অজানা আতঙ্ক রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় কী ভাবে পুঁজি ধরে রাখবে তা নিয়ে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের হা হুতাশ। তাছাড়া দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।
এদিকে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশন দীর্ঘ ৫ মাস অতিবাহিত হলেও কার্যকরী কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বরং নতুন নতুন যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেটা নিয়ে সমালোচনায়ই বেশি হয়েছে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা সংকট বেড়েই চলছে। ফলে হতাশায় দিন গুনছে বিনিয়োগকারীরা। আর স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকারসহ সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি তীব্র আকারে ধারন করছে। ফলে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিছুতেই আস্থা ফিরে পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এমনকি দিন যতই যাচ্ছে, ততই গভীর হচ্ছে ক্ষত। ভুক্তভোগিরা প্রতিনিয়তই আশা নিয়ে বিনিয়োগ করছেন আর প্রতিবারই লোকসানী হচ্ছেন। পোর্টফোলিও থেকে মাইনাস হচ্ছে পুঁজি। মূলত এ কারণেই তাদের দু:চিন্তা আরও ভারী হচ্ছে।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আবদুল কাদের বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বড় ধনের লোকসানের মধ্যে রয়েছি। প্রতিদিনিই ভাবি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সকালের দিকে বাজারে একটু ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ দিন দরপতনই ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারের কোনো আস্থা থাকার কথা না। দিন যত যাচ্ছে আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হতাশা ততো বাড়ছে।
স্টক অ্যান্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী ইব্রাহিম বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে আমি খুবই হতাশ। প্রতিনিয়ত বাজারে দরপতন হচ্ছে। এই পতন কোথায় গিয়ে ঠেকবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজি অর্ধেক নেই হয়ে গেছে। হয়তো এই লোকসান থেকে আর বের হওয়া সম্ভব না।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে পুঁজিবাজারে গত ১৫ বছরে যে সব অপকর্ম হয়েছে সে বিষয়গুলোকে সামনে আনা হয়েছে। কিন্তু এর সংশোধনের জন্য কি কি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। এখন পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে আসা উচিত।
যদিও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, পুঁজিবাজারে মন্দার সময় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিস্কিয় ছিল তাদের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না? কিন্তু এ বিষয়ে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই সংস্কার এখন সব জায়গাতেই হচ্ছে। সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে যদি ভালো বিনিয়োগের জায়গায় না নেওয়া যায় তাহলে কোনো উদ্যোগেরই সুফলতা আসবে না।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐকের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুঁজিবাজার বিগত সময়ে কি হয়েছে তার একটি চিত্র পাওয়া গেছে। পুঁজিবাজারে গত ১৫ বছরের কত কোটি টাকার দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে, সক্রিয় বিনিয়োগকারী কেন কমেছে? বিদেশি বিনিয়োগের কি অবস্থা এ বিষয়েগুলো এসেছে।
কিন্তু এসব কিছু থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে এর কোনো উদ্যোগের কথা বলা হয়নি। এখন পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ প্রয়োজন। এমনকি ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা উচিত। তা না হলে, পুঁজিবাজারের জন্য কোনো উদ্যোগই বিনিয়োগকারী বান্ধব হবে না।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। যে কারণে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেই বাজারে বিক্রির চাপ বাড়ছে। আর বিক্রির চাপ বাড়ার কারণে দরপতন ঘটছে। বিক্রির চাপ না কমলে পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকানো সম্ভব না।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০৭ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৯ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬৯ টির, দর কমেছে ২৮২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮ টির। ডিএসইতে ৩৭১ কোটি ৬৯ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩২৪ কোটি ৩ লাখ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৪৫ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৪ টির এবং ৩৬ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।