টানা দরপতনে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা, ছয় কার্যদিবস দরপতন
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা পতনের বৃত্তে আটকে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই বড় দরপতন ঘটছে। ফলে নানা শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের বাজার থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। বিষয়টা এমন যে পুঁজিবাজার নয় অভিশাপের বাজার। বিনিয়োগ করলে লোকসান। এ নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ন্যূনতম ভ্রক্ষেপ নেই। বিনিয়োগকারীরা দিনের পর দিন পুঁজি হারালো নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।
আর পুঁজিবাজার ইস্যুতে সেসব উদ্যোগের কোনোটিতেই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না। দিন দিন এ আস্থা আরও তলানিতে ঠেকছে। এতে যেমন বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ব্রোকারেজ হাউসগুলোও লেনদেন খরার ফলে বিপাকে পড়েছে। ফলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব গোষ্ঠীর মনেই এখন এক চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কবে ফিরবে পুঁজিবাজারে সুদিন, সেই অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা।
এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূচকের দরপতনের মধ্যে লেনদেন শেষ হয়েছে। এর মাধ্যমে চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে চলতি বছরে লেনদেন হওয়া ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ৬ কার্যদিবসেই দরপতন হলো। এর আগে ২০২৪ সালজুড়ে পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। এতে এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। বাজার মূলধনের বড় পতনের পাশাপাশি মূল্যসূচকেরও বড় পতন হয় বছরটিতে। ২০২৪ সালে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট।
এমন দরপতনের পর নতুন বছর ২০২৫ সালে পুঁজিবাজারে সুদিন দেখা যাবে এমন প্রত্যাশায় ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ অব্যাহত দরপতনের কবলে পড়ে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) ৯ দশমিক ৫০ পয়েন্ট নেমে যায়। পিই ১০-এর নিচে নেমে গেলে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু নতুন বছরেও পুঁজিবাজারে সুদিন ফেরেনি। বরং আগের মতোই দরপতনের বৃত্তেই আটকে রয়েছে পুঁজিবাজার। ফলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা দিন যতই যাচ্ছে ততো ভারি হচ্ছে।
পুঁজিবাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, পুঁজিবাজারে মারাত্মক আস্থা সংকট দেখা দিয়েছে। বাজার ভালো করতে হলে সবার আগে এই আস্থা সংকট দূর করতে হবে। কিন্তু বাজারে আস্থা ফেরাতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ সংশ্লিষ্টদের নিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজার ততোই তলানিতে নামছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমানে লেনদেন বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৫১ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক .৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক .৯৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০৬ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০০ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯১ টির, দর কমেছে ২৪৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬২ টির। ডিএসইতে ৩৯৭ কোটি ৮১ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৭১ কোটি ৬৯ হাজার টাকা ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪০১ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১৮ টির এবং ৩০ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫৪ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।