পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কান্না কেউ শুনছে না
শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজারে পতনের মাত্রা ততই বাড়ছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূচকের দরপতনের মধ্যে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে চলছে নিরব রক্তক্ষরণ। এ নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে বছরের শুরুতে ফের টানা দরপতন হলেও বিনিয়োগকারীদের কান্না কেউ শুনছে না। বছরের শুরুতে ৯ কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবসে দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগষ্টের পর অর্থনীতির দুই একটি খাত কিছুটা পরিবর্তন হলেও পুঁজিবাজার ব্যতিক্রম। পুরোবাজার নেতিবাচক অবস্থায়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে ভিন্ন কথা। যারা আগে বাজারে কারসাজি করেছিল, তাদের বেশ কিছু লোকজনের ব্যাপারে বিএসইসি ব্যবস্থা নিচ্ছে। ফলে ওই চক্রটি বাজারে পরিকল্পিতভাবে পতন ঘটাচ্ছে। এদিকে ৫ আগষ্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হলে পরপর কয়েকদিন ইতিবাচক হয় বাজার। তবে তা ধরে রাখা যায়নি। এ সময়ে বিএসইসিতে পরিবর্তন আসে।
একজন চেয়ারম্যানকে নিয়োগ দিয়ে পরের দিন আবার পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা একেবারেই অনভিজ্ঞ। বাজারের ব্যাপার কোনো ধারণা নেই। বাজারের অনেক পরিভাষাই তারা বুঝেন না। নতুন কমিশনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ছিল বির্তকিত। স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদ গঠন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাজারে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি করে। বিষয়টি বাজার সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে নেয়নি। ফলে টানা দরপতন শুরু হয়। এখনও তা অব্যাহত আছে।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী প্রভাষক কাজী হোসাইন আলী বলেন, পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। যে কারণে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেই বাজারে বিক্রির চাপ বাড়ছে। আর বিক্রির চাপ বাড়ার কারণে দরপতন ঘটছে। বিক্রির চাপ না কমলে পুঁজিবাজারের দরপতন ঠেকানো সম্ভব না।
কারণ বিএসইসি বর্তমান চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই বলে চলে। ফলে একটু বাড়লে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগকারীরা বের হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে ২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পুঁজিবাজারের। গত ১৫ বছর বিনিয়োগকারীর যে ক্ষতি হয়েছে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে গত পাঁচ মাসে।
মিজানুর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বড় ধনের লোকসানের মধ্যে রয়েছি। প্রতিদিনিই ভাবি বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। সকালের দিকে বাজারে একটু ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ দিন দরপতনই ঘটে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারের কোনো আস্থা থাকার কথা না। দিন যত যাচ্ছে আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হতাশা ততো বাড়ছে। এখন মুল কথা বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ না করলে বাজার স্বাভাবিক হবে না।
ইব্রাহিম নামের আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে আমি খুবই হতাশ। প্রতিনিয়ত বাজারে দরপতন হচ্ছে। এই পতন কোথায় গিয়ে ঠেকবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। এরই মধ্যে বিনিয়োগ করা পুঁজি ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। হয়তো এই লোকসান থেকে আর বের হওয়া সম্ভব না।