শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। ফলে কোন উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না পুঁজিবাজারে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএসইসি নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণের পর পুঁজিবাজার সংস্কারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তবে কোন উদ্যোগই পুঁজিবাজারে দরপতন থামাতে পারেনি। বরং গত ১৭ বছরের পতনের চেয়ে গত পাঁচ মাসে দরপতনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিনিয়োগকারীরা। সরকার পরিবর্তনের পর বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করলেও আশাহত হতে হয়েছে তাদের। ২০২৪ সালের শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজারের অবস্থা আরও শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে ৫ আগস্টের পর।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলছেন, নতুন সরকার গঠনের পর সবাই আশা করেছে বাজারে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হবে। এতে আস্থা ফিরবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। নিঃস্ব বিনোয়গকারীরা ফিরে পাবেন হারানো মূলধন। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির কোন মিল নেই। বরং বাড়ছে লোকসানের পাল্লা। এদিকে নতুন বছরের শুরু থেকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস পর্যন্ত পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন। ২০২৫ সালে ১০ দিন লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এর মধ্যে মাত্র তিনদিন সূচকের উত্থান দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। বাকি সাত কার্যদিবসে ছিল পতনমুখী।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, একে তো পুঁজিবাজারে নেই নতুন বিনিয়োগ, তার ওপর সরকারের নতুন করে আরোপ করা সেবা ও পণ্যের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে ফেলেছে। কারণ, পণ্য ও সেবা খাতে বাড়তি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে পণ্য ও সেবার দাম কোন পর্যায়ে পৌঁছে, জীবনযাত্রাকে কোনো পর্যায়ে নিয়ে যায় তা নিয়েই ভাবনা এখন বিনিয়োগকারীদের।

এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কাজী বাহার বলেন, এখন পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ উত্তোলনে বেশি আগ্রহী। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যখন বিনিয়োগ হারিয়ে যাচ্ছে, তখন নতুন বিনিয়োগের তো প্রশ্নই আসে না। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দীর্ঘদিন থেকে। নতুন সরকার আসার পর প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য কিছুটা সহনীয় হবে। কিন্ত সম্প্রতি সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সব ধরনের পণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি সূচকের পতন হয়েছে ১২ জানুয়ারি ৩৮ পয়েন্ট। এর আগে ৫ জানুয়ারি পতন হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি সূচকের উত্থান হয়েছিল ১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। ৬ জানুয়ারি উত্থান হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট এবং ৯ জানুয়ারি সূচক বেড়েছিল ৯ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। তবে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচকের সাথে কমেছে টাকার পরিমানে লেনদেন। তবে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৫০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯০৪ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮১ টির, দর কমেছে ১৩১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৮৪ টির। ডিএসইতে ৩৫১ কোটি ১১ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৯৭ কোটি ৮১ হাজার টাকা ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৪ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৭ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৫টির দর বেড়েছে, কমেছে ৭২ টির এবং ৩০ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।