শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে এমন প্রত্যাশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু সেই প্রত্যাশা বাদ দিয়ে এখন পুঁজি নিয়ে শঙ্কিত তারা। তাছাড়া টানা দরপতনের ফলে আস্থার সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে, যা গত সপ্তাহের লেনদেনেও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই ডিএসইতে সূচকের দরপতন হয়েছে। সূচকের টানা দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিরব আচরন করছেন। এ যেন এক পুঁজি হারানোর বাজার।

পরিস্থিতি এমন যে ৯৬ ও ২০১০ সালের ধসকে হার মানিয়েছে। গত পাঁচ মাসের টানা দরপতনে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর পুঁজি ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া টানা দরপতনে লেনদেনের পরিমাণও নেমে এসেছে তলানিতে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা ও উদ্বেগ। তাঁদের এই অসহায়ত্বের প্রতি সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো দৃষ্টি নেই। এছাড়া ‘কারসাজি’র ভীতিতে পুঁজিবাজার বিমুখ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। কারসাজির শেয়ারের দাপটে শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল শেয়ারও বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ফলে পুঁজিবাজারে শেয়ারের দাম পড়ছে। ফলে পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমছে। তাদের লোকসান বাড়তে বাড়তে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। তারল্য সংকট এবং নতুন বিনিয়োগের অভাবে বাজারে থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আস্থাহীনতা এবং পুঁজিবাজারের অনিশ্চয়তার কারণেই বাজার এই কঠিন অবস্থানে পৌঁছেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে বাজারে সংস্কারের ফলে এই নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে এবং সংস্কার পরবর্তীকালে বাজারের অবস্থান পুনরুদ্ধার হবে। তবে বাজারে দরপতন ঠেকানোর জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বাজারের এই করুন পরিনিতি। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আমরা যেন বড় ভুল করেছি। পুঁজি শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু কেউ আমাদের কথা ভাবছে না। কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। এ ভাবে একটি দেশের পুঁজিবাজার চলতে পারে না। দ্রুত নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদত্যাগ করা উচিত।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন হয়েছে। সপ্তাহ জুড়ে কমেছে বাজার মূলধন ও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ৩ হাজার ৩৫২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার বাজার মূলধন কমেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ২৯৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার ৩৫২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা .৫১ শতাংশ। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৯০ কোটি ৩৭ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৭৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৫০ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৮৯৪ পয়েন্টে। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৩৯৬ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০৯ টির, দর কমেছে ২৬৩ টির এবং ২৪টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সপ্তাহজুড়ে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০৮.০০ পয়েন্ট বা ০.৭৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৫১.৯১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ৬৮.৭৭ পয়েন্ট বা ০.৭৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭২৮.৩৩ পয়েন্টে। অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই ৫০ সূচক ১৩.৪৭ পয়েন্ট বা ১.২১ শতাংশ কমে এবং সিএসআই সূচক ১.৫৫ পয়েন্ট বা ০.১৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ৯৬.৩৬ পয়েন্টে এবং ৯৩৪.৫৯ পয়েন্টে।

এছাড়া, সিএসই-৩০ সূচক ১৫৭.৬৪ পয়েন্ট বা ১.৩২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৫৯.৫০ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ২৯২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৮টি, কমেছে ১৮৫টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টির। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৪ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৩৪ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ৮৯ হাজার ৬১৯ টাকা বা ১০৭.৫৬ শতাংশ।