দুর্বল মৌলভিত্তির দৌরাত্বে হোঁচট খাচ্ছে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা

শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা তিন কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ফের সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে বাজার একটু ঘুরতে না ঘুরতে ফের দরপতনে লেনদেন শেষ হওয়ায় আস্থা সংকটে ভুগছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ এর আগে কয়েক বার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীলতায় ফিরেনি।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারে দরপতন হয়। এতে এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে দুই হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৬০ দশমিক ৫১ পয়েন্ট। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম তিন কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে পুঁজিবাজার। এ পরিস্থিতিতে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার মধ্যে দিয়ে তবে দিনশেষে অধিকাংশ কোম্পানির দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।
এদিকে টানা দরপতনে বাজারের প্রতি আস্থা নেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। তবে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে একটি চক্র। ফলে দুর্বল শেয়ারে হু হু করে বাড়ায় আস্থা বেড়েছে, অন্যদিকে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে দীর্ঘদিন ধরে দর না বাড়ায় অনাস্থা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে দরপতনে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম খাদের কিনারায়। বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে আটকে থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না।
অন্যদিকে মৌলভিত্তি শেয়ার উপেক্ষা করে কখনও কখনও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। কিছুদিন বাড়ার পর আবার হঠাৎ করে অস্বাভাবিক দরপতন হচ্ছে। এর ফলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর সবই ছোট মূলধনের সর্বস্ব কোম্পানি। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই প্রভাবিত করা যায়।
যে কারণে চক্রটি কারসাজি করতে ছোট মূলধনের দুর্বল কোম্পানিগুলো বেছে নিচ্ছে। এসব কারণে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে বাজার মাঝে মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেও দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের দৌরাত্ব বেড়ে যাওয়ায় পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা স্থায়ী হচ্ছে না।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মন্দা বাজারে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পাওয়া এবং ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর দর কমে যাওয়া স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ নয়। আর এ ধরণের শেয়ারগুলোর দর বৃদ্ধি পেলে বাজারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয়। তাই এসব শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বিনিয়োগকারীদের মার্কেট সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। আরও দেখে শুনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে দুর্বল মৌল ভিত্তি শেয়ার থেকে দুরে থাকতে হবে। তবে তিন কার্যদিবস সূচকের উত্থানের পর একটু কারেকশনে ভয়ের কিছু নেই। তবে কয়েক দিন সূচকের টানা উত্থান হলে মার্কেট অনেকটা স্থিতিশীল হত। আর এর জন্য বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১৭৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৯১৯ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯২ টির, দর কমেছে ২৪৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৭ টির। ডিএসইতে ৪১৩ কোটি ১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৯৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৬ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০৩ টির এবং ২০ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।