জুতা রপ্তানিতে বড় চমক, রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি

আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) জুতা রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ সময় রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ইপিবি বলছে , চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মোট ৬২ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছে।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থের পরিমাণ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এই আয় গত অর্থ বছরের একই সময়ে চেয়ে ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এই ছয় মাসে ৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছিল।
জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে জুতা রপ্তানি থেকে প্রায় ৬৩ কোটি ডলার আয়ের মধ্যে চামড়ার জুতা থেকে এসেছে ৩৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি এসেছে ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ। অন্যদিকে এই ছয় মাসে চামড়াবিহীন জুতা বা নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানি করে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এই ছয় মাসে ১৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের নন-লেদার জুতা রপ্তানি হয়েছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চামড়ার জুতার বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওযায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। তখন বাংলাদেশের জুতা রপ্তানিতেও ভাটা পড়ে। এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসায় সেসব দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সে কারণে অন্যান্য পণ্যের মতো জুতার চাহিদাও বেড়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি কমেছে; মানুষ আগের মতোই কেনোকাটা করছে। সে কারণে জুতা রপ্তানি বাড়ছে। এই অর্থবছরে না হলেও আগামী অর্থবছরে চামড়ার জুতা রপ্তানি থেকে আয় ১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করবে বলে আশা করছি।
ইপিবির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে চামড়ার জুতা রপ্তানি থেকে ৫৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার আয় করেছিলেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে সেই রপ্তানি প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৭৫ কোটি ৬২ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। এই অঙ্ক ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছরে জুতা রপ্তানি থেকে সর্বাধিক আয়। তবে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই খাত থেকে আয় ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে ৬৯ দশমিক ৩২ লাখ ডলারে নেমে আসে। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ কমে ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারে নেমে আসে।
তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শুরু থেকেই চামড়ার জুতা রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই অর্থ বছরে এ খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থ বছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ অর্ধেক সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) আয় হয়েছে ৩৫ কোটি ২৭ লাখ ডলার। গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে এই আয় প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আয় হয়েছিল ২৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
সবশেষ ডিসেম্বর মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে আরও বেশি, ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ। এই মাসে ৭ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের জুতা রপ্তানি হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৪ কোটি ১১ লাখ ২০ হাজার ডলার। এই অর্থ বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ২৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি আগের অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ১৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি হয়েছিল।
এদিকে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাজারমূল্যে কোম্পানির আরও ৫০ হাজার শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তিনি এই শেয়ার কিনতে চান। এর আগেও তিনি বাজার থেকে শেয়ার কিনেছেন।
১৯৯৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা।
কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের সংখ্যা ১ কোটি ৫৭ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭। পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পরপর তিন বছর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার। কোম্পানিটি ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য ৪৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২২ সাল থেকে টানা তিন বছর বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২১ সালে এক নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, শেয়ারবাজারের মূল বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার নিচে থাকতে পারবে না। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাদের মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম, তাদের মূলধন বৃদ্ধিতে সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল বিএসইসি। ওই সময়সীমার মধ্যে অনেক কোম্পানি মূলধন বৃদ্ধির এই শর্ত পূরণ করেনি। তারা এ শর্ত পূরণে বিএসইসির কাছ থেকে সময় নেয়।
বিএসইসির এই শর্ত পরিপালনে অনেক কোম্পানি কয়েক বছর ধরে বোনাস, অধিকারমূলক বা রাইট শেয়ার ছেড়ে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করছে। তারই ধারাবাহিকতায় অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারও বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে যাচ্ছে। গত এক বছরে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ২৬৯ টাকা এবং সর্বনিম্ন দাম ১৮৮ টাকা।