শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে লেনদেন একেবারেই তলানিতে নেমে এসেছে, সূচক পড়ছেই। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে গেছে। সবার মধ্যে ক্ষোভ-হতাশা বিরাজ করছে। ফলে দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতা বাড়ছেই। কোন ক্রমেই পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট কাটছে না। আওয়ামী সরকারের পতনের পর সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন এবার ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরাও হয়ে উঠেছিলেন আশাবাদী। অবশ্য সরকার পতনের পর কয়েকদিনের পুঁজিবাজারে সেই প্রতিচ্ছবিও পরিলক্ষিত হয়েছে। সেই সময়ে সূচকের উল্লম্ফনের সঙ্গে লেনদেনও ছাড়িয়েছিল ২ হাজার কোটি টাকা। তবে এর স্থায়িত্ব ছিল হাতেগোনা কয়েকদিন।

এরপর দীর্ঘদিন ধরে খাদের কিনারায় পুঁজিবাজার। লেনদেন নেমেছে ২০০ কোটির ঘরে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরের কয়েক মাসে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সেগুলো আস্থা ফেরাতে পারছে না বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এ অবস্থায় টানা দরপতনে অনেকে আর ভরসা রাখতে পারছেনা। এ আস্থাহীনতার কারণে পুঁজিবাজার আর আগের গতি ফিরে পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্ত ও বিগত সরকারের লুটপাটই অব্যাহতভাবে পুঁজিবাজারে দরপতন হওয়ার কারণ। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি পাওয়ায় পুঁজিবাজারের ওপর একটা প্রভাব পড়েছে। এ থেকে বের হতে অনেক সময় লাগবে। তবে গত সপ্তাহে তিন কার্যদিবস সূচকের কিছুটা উত্থানে ডিএসইতে বেড়েছে সূচক-লেনদেন ও বাজার মূলধন। এ সময়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। একই সঙ্গে সপ্তাহজুড়ে ডিএসই ও সিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৪ হাজার ২৯০ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশিকুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের সমস্যা এখনো কাটেনি। আরো নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়িয়েছে এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর একের পর ভুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। বিনিয়োগকারীদের ভুল শেয়ারে বিনিয়োগ করা এখনো কমেনি। ফলে মন্ধা বাজারে দুর্বল শেয়ারের দাম বাড়ছেই।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মানুষ পুঁজিবাজার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জোর করে পুঁজিবাজার ভালো রাখার যেসব চেষ্টা করেছিল, তার সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে। বিএসইসির প্রধানসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারীর অভিযোগের শেষ নেই। তারা বলেছেন, বিএসইসির কর্তাব্যক্তিরা শুধু বড় বড় কথাই বলে গেছেন, কাজের কাজ কিছুই করেননি। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা এখন সব হারিয়ে পথে বসেছেন। তবে সপ্তাহজুড়ে সূচকের উত্থানে টাকার পরিমাণে লেনদেন বেড়েছে। সপ্তাহটিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা বাজার মূলধন বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪০ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার টাকা। যা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৩ হাজার ৬৪৭ কোটি ২৯ লাখ ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ২ হাজার ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ১ হাজার ৮৯০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ১৭২ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৯১৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬১ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৭ টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২০১ টির, কমেছে ১৫০ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৬ টির শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সপ্তাহজুড়ে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৭.১৪ পয়েন্ট বা ০.৬৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪৪৯.০৫ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ৬৯.০৫ পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৯৭.৩৯ পয়েন্টে। অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১১.২৯ পয়েন্ট বা ১.০৩ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ৫.০১ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ১০৭.৬৫ পয়েন্টে এবং ৯৩৯.৬০ পয়েন্টে।

এছাড়া, সিএসই-৩০ সূচক ১১৮.২০ পয়েন্ট বা ১.০০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৭৭.৭১ পয়েন্টে। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টি, কমেছে ১১৩টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৫টির। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৮৮ টাকার। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৪ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬২ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬৫ টাকা বা ৭৪.৩০ শতাংশ।