মন্দা পুঁজিবাজারে ‘পচা’ শেয়ারের দাপট, ভালো শেয়ারে অনাস্থা

মোবারক হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা অনিয়মের ফলে ধুঁকছে দেশের পুঁজিবাজার। ধারাবাহিক দরপতনে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা অসংখ্য বিনিয়োগকারী। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে শৃঙ্খলা ফেরার আশা করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বিদ্যমান বাজার প্রবণতায়। দেশের পুঁজিবাজারে এখন দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির ‘পচা’ শেয়ার কেনাটা ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপরীতে তুলনামূলক সস্তায় মিলছে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার।
কারণ স্বল্প সময়ে বেশি লাভের আশায় বেশি দামে পচা বা জাঙ্ক শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা। এ অবস্থায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে একটি চক্র। ফলে দুর্বল শেয়ারে হু হু করে বাড়ায় আস্থা বেড়েছে, অন্যদিকে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে দীর্ঘদিন না বাড়ায় অনাস্থা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজারে দরপতনে ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারের দাম খাদের কিনারায়। বিনিয়োগকারীরা ভালো মৌল ভিত্তি শেয়ারে আটকে থাকায় বিক্রি করতে পারছেন না।
অন্যদিকে মৌলভিত্তি শেয়ার উপেক্ষা করে কখনও কখনও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। কিছুদিন বাড়ার পর আবার হঠাৎ করে অস্বাভাবিক দরপতন হচ্ছে। এর ফলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর সবই ছোট মূলধনের সর্বস্ব কোম্পানি। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই প্রভাবিত করা যায়। যে কারণে চক্রটি কারসাজি করতে ছোট মূলধনের দুর্বল কোম্পানিগুলো বেছে নিচ্ছে। এসব কারণে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এর ফলে পুঁজিবাজারে কোনোভাবেই স্বস্তি ফিরছে না। একদিন সূচক কিছুটা বাড়লে পরের দিনই পতনে চলে যায়। আগের দিনের ইতিবাচক বাজার দেখে বিনিয়োগকারীদের যদিও আশা নিয়ে বাজারে আসে, কিন্তু সেদিন চোখে পড়ে পতনের তোড়। এভাবে প্রতিনিয়ত হোচটের মুখে রয়েছেন তারা। কিন্তু বাজারের এই ডামাডোলের মধ্যেও দুষ্ট একটি চক্র লোকসানি ও দুর্বল মৌলের কিছু শেয়ার নিয়ে প্রতিনয়ত মাতামাতি করে চলছে।
তারা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর তুঙ্গে তুলে নানা রকম গুঞ্জন রটায়, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগ শিক্ষার ঘাটতি, স্বল্প সময়ে অতি মুনাফার লোভ এবং কারসাজির কারণে দুর্বল আর্থিকভিত্তির জাঙ্ক বা পচা শেয়ারের দাম চড়া। পুঁজিবাজারের সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে বেশির ভাগ শেয়ারই জাঙ্ক, ভালো শেয়ারের সংখ্যা কম। বাজারের কাঠামো অনুযায়ী এটা হবেই। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রধান সমস্যা হচ্ছে আমাদের গভর্ন্যান্স, মনিটরিং বা সার্ভেইল্যান্স খুবই দুর্বল। বর্তমান সার্ভেইল্যান্স দিয়ে হচ্ছে না। এগুলো দুর্বল। এগুলোর পরিবর্তন করতে হবে।
এদিকে গত সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ‘জেড’ গ্রুপের ৪ কোম্পানির শেয়ার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ার সপ্তাহের শীর্ষ দাম বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে এসেছে। কোম্পানিগুলো হলো: খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ, ঢাকা ডাইং, দুলামিয়া কটন মিলস লিমিটেড। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডিএসইর সপ্তাহজুড়ে দাম বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং রয়েছে প্রথম অবস্থানে, অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ দ্বিতীয় অবস্থানে, ঢাকা ডাইং ৬ষ্ট অবস্থানে এবং দুলামিয়া কটন মিলস ৭ম অবস্থানে।
সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিগুলোর মধ্যে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার দাম বেড়েছে ২২.৮১ শতাংশ, অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজের ১৯.৪৯ শতাংশ, ঢাকা ডাইংয়ের ১২.৮২ শতাংশ এবং দুলামিয়া কটন মিলসের ১২.৩০ শতাংশ। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সপ্তাহজুড়ে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৫ হাজার, অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজের ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার, ঢাকা ডাইংয়ের ৬৩ লাখ ৭১ হাজার এবং দুলামিয়া কটন মিলসের ৭৬ হাজার শেয়ার।