শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের তলানিতে নেমে গেছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই কমছে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। এতে হতাশা বাড়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। পুঁজি হারিয়ে হা-হুতাশ করছেন তারা। চরম সংকটের সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিস্কিয়তায় ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট কোনোভাবেই কাটছে না। আওয়ামী সরকারের পতনের পর সংশ্লিষ্টরা ভেবেছিলেন এবার ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরাও হয়ে উঠেছিলেন আশাবাদী। অবশ্য সরকার পতনের পর কয়েকদিনের পুঁজিবাজারে সেই প্রতিচ্ছবিও পরিলক্ষিত হয়েছে।

সেই সময়ে সূচকের উল্লম্ফনের সঙ্গে লেনদেনও ছাড়িয়েছিল ২ হাজার কোটি টাকা। তবে এর স্থায়িত্ব ছিল হাতেগোনা কয়েকদিন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে খাদের কিনারায় পুঁজিবাজার। লেনদেন নেমেছে ২০০ কোটির ঘরে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরের কয়েক মাসে একগুচ্ছ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সেগুলো আস্থা ফেরাতে পারছে না বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ফলে হতাশা ও অজানা আতঙ্কে ভর করছে পুঁজিবাজার।

এদিকে গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই মূল্যসূচকের পতন হয়েছে। এক কার্যদিবসে মূল্যসূচক বাড়লেও দাম কমার তালিকায় ছিল বেশি কোম্পানি। ফলে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।

ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি কোম্পানি স্থান পেয়েছে, তার প্রায় তিনগুণ কোম্পানি রয়েছে দাম কমার তালিকায়। স্বাভাবিকভাবেই পতন হয়েছে সবকটি মূল্যসূচকের। সেই সঙ্গে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণও। তবে এই পতনের বাজারেও ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। যা সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন ৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা বেড়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ১ হাজার ৬৯৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে হয়েছিল ২ হাজার ৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন ৩৬৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা কমেছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১১২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৭ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৩৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৯০৩ পয়েন্টে। বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯৬ টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৮ টির, কমেছে ২৭২ টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬ টির শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সপ্তাহজুড়ে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৪.৯৭ পয়েন্ট বা ১.০৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৯৪.০৭ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ৯৬.৪১ পয়েন্ট বা ১.০৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭০০.৯৭ পয়েন্টে।

অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১০.৯৩ পয়েন্ট বা ০.৯৯ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ১৬.৫৭ পয়েন্ট বা ১.৭৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ৯৬.৭২ পয়েন্টে এবং ৯২৩.০৩ পয়েন্টে। এছাড়া, সিএসই-৩০ সূচক ৯.৫২ পয়েন্ট বা ০.০৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮৬৮.১৯ পয়েন্টে।