উত্তপ্ত আন্ডারওয়ার্ল্ড, কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ফের অপরাধজগতে

দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নির্মাণাধীন ভবনে বেশ কয়েকজন যুবক গিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে সেই নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়। ভুক্তভোগী পরবর্তী সময়ে জানতে পারেন এটি একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী নাম্বার। তাদের চাহিদামতো চাঁদা না দিলে অস্ত্রধারী যুবকরা গিয়ে গুলি করে এবং হামলা-ভাঙচুর চালায়। পুলিশও তাদের রুখতে পারে না। এমন ঘটনা এখন রাজধানীর নিত্যদিনের ঘটনা। একে একে জামিনে মুক্তি পেয়েছে ৭ শীর্ষসহ ২৭ দাগি সন্ত্রাসী।
ফলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনও স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। ধরা পড়েনি জেলপলাতক তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা। আর গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ আগস্টের পর জামিনে বেরিয়ে আসা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মহাঝামেলায় পড়েছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বিভাগ। ‘লাল দালানের বাসিন্দা’ এসব অপরাধীকে কীভাবে ‘ঘরে’ ফিরিয়ে আনা যায় সেই পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। চলছে নতুন পরিকল্পনা।
আইনশৃঙ্খলার অবনতির এমন প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। সারাদেশে ২৪ ঘণ্টায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও অন্যান্য অপরাধে এক হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে অপারেশন ডেভিল হান্টে ৬০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। ইনামুল হক সাগর জানান, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও অন্যান্য অপরাধে গতকাল রাত থেকে আজ পর্যন্ত এক হাজার ৭৭৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর মধ্যে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার ৬০৭ জন এবং অন্যান্য মামলা ও ওয়ান্টেমূলে গ্রেফতার এক হাজার ১৬৮ জন। অভিযানের দ্বিতীয় দিন গত সোমবার রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ ৩৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি চলছে নিয়মিত অন্যান্য অভিযানও। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৫-৮ আগস্ট পর্যন্ত মূলত দেশে কোনো সরকার ছিল না। এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকাভুক্ত প্রায় সব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে মুক্তি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর প্রায় সবাই ১৫-২০ বছর ধরে বন্দি ছিল। ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারের শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম, হাজারীবাগের সানজিদুল ইসলাম ইমন, মিরপুরের কিলার আব্বাস নামে পরিচিত আব্বাস উদ্দিন, মোহাম্মদুপরের ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু এদের মধ্যে অন্যতম। শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মুক্ত বাতাসে বেরিয়েই ফিরে গেছে অন্ধকার জগতে। ওদের দাপুটে তৎপরতায় অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের অপরাধজগৎ। বেড়েই চলেছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড।
২০০১ সালে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করেছিল তৎকালীন সরকার। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল সুব্রত বাইন। তার নামে এখনও ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি রয়েছে। তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রতর গ্রুপ রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, ইস্কাটনসহ আশপাশের এলাকায় নতুন করে সক্রিয় হয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুই মাস না পেরোতেই গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মগবাজারের বিশাল সেন্টারে দলবল নিয়ে মহড়া দেন সুব্রত বাইন। তিনি সেখানকার ব্যবসায়ীদের ডেকে কথা বলেন। এ নিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা গেছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার আগে এই বিশাল মার্কেট সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের দখলে ছিল। দোকান ভাড়া নিতে প্রতি স্কয়ার ফুট হিসাব করে সুব্রত বাইনকে টাকা দিতে হতো। আর দোকানে কেনাবেচায় তো তাকে চাঁদা দেওয়া ছাড়া সম্ভবই ছিল না। বর্তমানে চেহারায়ও বেশ পরিবর্তন এনেছেন। দাড়ি রেখেছেন তিনি। ঢাকার একসময়ের আন্ডার ওয়ার্ল্ডের অন্যতম ডন ছিলেন শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম। সবসময় বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতেন। কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, রাজাবাজার, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও শেরেবাংলা নগরসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আলোচিত সব হত্যাকাণ্ডে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।
সুইডেন আসলামের নামে ২২টি মামলা হয়েছে, যার ৯টিই হত্যা মামলা। দীর্ঘ চেষ্টা ও নানা পরিকল্পনার পর ১৯৯৭ সালের ২৬ মে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সুইডেন আসলামকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল। ২০০৫ সালের ৩১ জানুয়ারি পুনরায় গ্রেপ্তার হন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। কন্ট্রাক্ট কিলিংসহ নানা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার পূর্ব ইতিহাস থাকা এই সন্ত্রাসীর কারামুক্তিতে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে আছেন।
গত ১০ জানুয়ারি রাতে এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে প্রায় ২০ জনের একটি দল প্রকাশ্যে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করে। চাঁদা না পেয়ে মার্কেটটি দখলের জন্য এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্য সচিব এহতেসামুল হককে কোপানো হয়। ওই ঘটনার ১০-১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে সক্রিয় হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুই ব্যবসায়ীর ওপর হামলার নেপথ্যে রয়েছে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপ ও পিচ্চি হেলালের আধিপত্য বিস্তার আর চাঁদাবাজির দ্বন্দ্ব। অভিযোগ রয়েছে, ইমন কারাগারে থাকাকালে তার গ্যাংয়ের সদস্যরা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক ব্যবসায়ীকে চোখ বেঁধে একটি ভবনে নিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেয়। নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই ব্যবসায়ী টাকা পরিশোধ করেন। গত বছরের ১৫ আগস্ট ইমন জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ডিসেম্বরে তার বাহিনীর সদস্যরা ওই ব্যবসায়ীর কাছে আরও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।
জানা গেছে, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগানসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফুটপাতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইমন বাহিনী। ইতোমধ্যে ২২টি বড় মার্কেট দখল করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে তার সন্ত্রাসী গ্রুপ। মোহাম্মদপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের তৎপরতাও দৃশ্যমান। পিচ্চি হেলালকে ২০০০ সালের ১২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বছরের ১৬ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর পরপরই গত ২০ সেপ্টেম্বর রায়েরবাজারে সাদেক খান আড়তের সামনে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ওই দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় পিচ্চি হেলালের বিরুদ্ধে মামলা হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার ‘দখল’ নিতে সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের বিরোধে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবে ওই ঘটনার চার মাসেও পিচ্চি হেলালকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে তার অবস্থান এখনও অজানা। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ: তারা গত ডিসেম্বরে রাজধানীর ভাসানটেকের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনটি ভবন ভাঙার কাজে বাধা দেয় এবং ঠিকাদারের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দেড় লাখ টাকা দিতে চাইলেও তারা কাজ বন্ধ করে দেয় এবং ঠিকাদারকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের বেশ কয়েকজন কর্মচারী জানান, নভেম্বরের শেষের দিকে ভবন ভেঙে নতুন ছয়তলা কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য দরপত্র জারি করা হয়েছিল। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হুমকির কারণে কাজ শুরু হয়নি। মগবাজারে একটি ভবন ভাঙার কাজ পাওয়া এক ঠিকাদার বলেন, ‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। চাঁদাবাজির সঙ্গেও আমরা পরিচিত। তবে গত কয়েক মাস ধরে শীর্ষ অপরাধীদের নামে নজিরবিহীনভাবে বড় অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনেক খারাপ। হুমকির কারণে ভাসানটেকের একটি প্রকল্প বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি আমরা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘জানি না ক্রমাগত এই হুমকির মুখে কীভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দমনে খুব যে তৎপর সেটা বলা যাচ্ছে না। তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম আরেকজন খোরশেদ আলম রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু। ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালত থেকে জামিন পেয়ে গত বছরের ১৩ আগস্ট কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ফ্রিডম রাসু জেল থেকে বেরিয়ে রাজধানীর রমনা, মতিঝিল, রামপুরা ও বাড্ডা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে তার বাহিনীকে নতুন করে সক্রিয় করেছেন। এর আগে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ফ্রিডম রাসু। পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর আফতাবনগর থেকে অস্ত্র-গুলিসহ ডিবির হাতে আবারও আটক হন তিনি। ২০০১ সালে বিজয়নগরের এক অফিসে সন্ত্রাসী ফ্রিডম রাসু, মানিক, সোহেল, জিসান ও মিরপুরের কেরামতের নেতৃত্বে ফাইভ স্টার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। এই বাহিনীর অপরাধ কর্মকাণ্ডে সে সময় ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দি থাকাবস্থায়ও এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর অনেকে কারাগারে থেকেই অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাইরে থাকা সাঙ্গোপাঙ্গদের মাধ্যমে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্রিয় ছিলেন। এখন তো ওরা লাগামহীন, বেপরোয়া। জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে নতুন করে অপকর্মে জড়িয়ে অস্থির করে তুলেছেন জনজীবন। ওদের লাগামহীন অপরাধে লাগাম পরানো না গেলে সামনের দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও খারাপ হতে পারে। আইনশৃঙ্খলার কাজে সম্পৃক্তরা মনে করছেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতায় ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই একটা আতঙ্কজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিশেষ করে নির্বাচন সামনে রেখে এদের মুক্ত বাতাসে বিচরণ করতে দেওয়া কোনোক্রমেই উচিত হবে না।
পুলিশের সাবেক ডিআইজি ও বর্তমানে অপরাধ বিষয়ক আইনজীবী নুরুল কবির বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যথাযথ কারণ দেখিয়ে জামিনে কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন বাতিল করে আবার আটকানো যেতে পারে। তবে ইতোমধ্যে যারা জামিনে খালাস পেয়ে গেছে, তাদের বিষয়টি জটিল। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে চাইবে না। ফলে এক্ষেত্রে সরকারকেই বাদী হয়ে নতুন মামলা করে তাদের আটকাতে হবে।’
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই জামিনে কারামুক্ত হওয়ার পর দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে দেশে ফিরেছে বলে জানা যাচ্ছে। তারা অপরাধের পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরে পেতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি চাঁদা চেয়ে ব্যবসায়ীদের হুমকি দিচ্ছে। কোথাও কোথাও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে জমি, মার্কেট, দোকান ও ফুটপাত দখল করছে। কারও কারও বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ চাঁদাবাজির মামলাও হয়েছে।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে যে, আধিপত্য বিস্তার করতে কিশোর ও তরুণদের দলে ভিড়িয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে নতুন করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে এই সন্ত্রাসীরা। অপরাধজগতে সাম্রাজ্য বিস্তার করতে আবার নতুন করে অস্ত্রও কিনছে তারা। ভাড়াটে কিলার হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি নতুন আরও অনেক মিশন নিয়ে ওরা নিজেদের অপরাধ সাম্রাজ্য নতুন করে গড়ে তুলছে।
কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে তা খোদ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও স্বীকার করেন। সম্প্রতি তিনি বলেন, যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বেরিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে, তাদের আবার তাড়াতাড়ি ধরে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, ‘দীর্ঘ সময় জেলে থাকার পরও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে কোনো সংশোধন নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। বয়স হলেও জেল থেকে বের হয়ে সেই আগের মতো চাঁদাবাজি, দলাদলি শুরু করে দিয়েছে তারা। আদালত কর্তৃক জামিনে জেল থেকে বের হয়ে আসা এসব সন্ত্রাসীর ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। ওদের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাচ্ছি।
জেল থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নানা ধরনের অপকর্মে জড়াচ্ছে। কদিন আগেও দেখলাম সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ক্যাশিয়ার খ্যাত জসিম জামিন পেয়েছেন। পত্রিকায় নিয়মিত খবর হচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে। এছাড়া জামিনে কারাগারের বাইরে বেরিয়ে আসা সন্ত্রাসীরা নানা অপকর্মে জড়ানোর তথ্য রেকর্ড হচ্ছে, মামলাও হচ্ছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পেলেই ধরে ফেলব। কাউকে ছাড় দেব না। আপাতত আমরা এসব শীর্ষ সন্ত্রাসীর জামিন বাতিলের জন্য আবেদন করব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ৫ আগস্টের পর জামিনে জেল থেকে বের হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কে কোথায় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের অবস্থান শনাক্ত ও অপরাধে জড়িতদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চলছে। কোনো সন্ত্রাসী রক্ষা পাবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।