দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন করে শুল্ক আরোপ করার পরপরই বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজারে ধস নামে। বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের শেয়ারবাজার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো পতনের মুখে পড়ে। তবে এবার খোদ ট্রাম্পের দেশেও তার ঢেউ লেগেছে। ধস নেমেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে। ২০২০ সালের করোনাসংকটের পর সবচেয়ে খারাপ দিন পার করছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।

স্থানীয় সময় গত বুধবার বেলা ৪টায় ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। কোন দেশের ওপর কত হারে পারস্পরিক শুল্ক আরোপ হবে, সংবাদ সম্মেলনে তার একটি তালিকাও তুলে ধরেন তিনি।

বিভিন্ন দেশের শেয়ারবাজারে যখন সূচক নেমে যাচ্ছিল ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা তাকিয়ে ছিলেন নিজ দেশের দিকে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নিজের দেশে এর কেমন প্রভাব পড়ে, তা দেখার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। ফলে তারা যে আশঙ্কা করেছিলেন বাস্তবে হলোও তাই। ধস নামল যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও। করোনা মহামারির পর এত বড় ধস দেখা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে। ট্রাম্প নিজে অবশ্য আশাবাদী। তার দাবি, অর্থনীতি আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশ যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে পাল্টা শুল্ক চাপানোর কথাও ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি হওয়া গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপ হওয়ায় বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা অন্যান্য দেশে গাড়ি উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই সোনা কেনা বন্ধ রেখে ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিরাপদ কিছু কিনতে চাইছেন। ডলারের দাম হ্রাস পেতে পারে বলেও চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। সব মিলিয়ে আগামী দিনে দেশটি মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল সময়ে ট্রাম্প বললেন, ‘এমনটা হওয়ারই কথা ছিল।’ একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির খারাপ অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোগী খুবই অসুস্থ ছিল। একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। অর্থনীতি মজবুত হতে চলেছে। দারুণ কিছু হবে।’ দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই শুল্কনীতি বদলে ফেলেছেন ট্রাম্প। তিনি জানান, যে সব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য থেকে যত শুল্ক নিয়ে থাকে, তাদের ওপরেও পাল্টা তত শুল্কই চাপানো হবে। এ বিষয়ে দেশের স্বার্থের কথাই শুধু মাথায় রাখবে ট্রাম্প প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধস নামে। দেশটির শীর্ষ ৫০০ কোম্পানির শেয়ার মূল্য পর্যবেক্ষণকারী এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ৪.৮ শতাংশ পড়ে যায়, যার ফলে বাজার থেকে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের মূল্য হারিয়ে যায়। ডাও জোন্স সূচক ৪ শতাংশ এবং প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক প্রায় ৬ শতাংশ কমে যায়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারবাজারে বিক্রির ঢল নামতে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক ১.৫ শতাংশ এবং ইউরোপের অন্য বাজারগুলোও পতনের মুখে পড়েছে, জাপান থেকে শুরু করে হংকং পর্যন্ত প্রতিফলিত হয়েছে এই ধসের প্রভাব। বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্যনীতি বৈশ্বিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার সূচনা করতে পারে। সূত্র: বিবিসি