আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একক কোনও মাসে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী মার্চ মাসে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে ৩২৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা এ পর্যন্ত রেমিট্যান্স আয়ের সর্বোচ্চ মাসিক রেকর্ড।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে প্রবাসীদের আগ্রহ বেড়েছে। ব্যাংকারদের মতে, অর্থপাচার কমে আসা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধির ফলেই রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের মার্চে যেখানে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১৯৯ কোটি ডলার, সেখানে চলতি বছরের মার্চে এসেছে ৩২৯ কোটি ডলার। অর্থাৎ, এক বছরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মোট ২ হাজার ১৭৭ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৭০৭ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে টানা ৭ মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি।

প্রবাসী আয় বৃদ্ধির ফলে দেশের ব্যাংকগুলোর ডলার সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটিও এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। এর আগে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহে একে-অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামায় বাজারে ডলারের দাম বেড়ে গিয়ে ১২৮ টাকায় পৌঁছেছিল। তবে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই রেমিট্যান্স ডলার কেনাবেচা হচ্ছে। এতে আমদানি বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রবাসী আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা জোগানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়বিহীন উৎস। এর বিপরীতে সরকারকে কোনও রকম অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে রিজার্ভে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে আসন্ন ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রবাসীদের পাঠানো এই উচ্চমাত্রার রেমিট্যান্স দেশের ভোক্তা ব্যয় এবং খুচরা বাজারে গতি আনবে বলে মনে করছেন তারা। একইসঙ্গে এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।