দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত দুটি ব্রোকারেজ হাউজের সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো হলো: আল হারামাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং সেলেস্টিয়াল সিকিউরিটিজ লিমিটেড। বিশ্বখ্যাত পারফিউম কোম্পানি আল হারামাইন পারফিউমস গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আল হারামাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ব্রোকারেজ হাউজ দুটির মোট সম্পদ মূল্য কম থাকায় প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির জারি করা আদেশ দুটি ব্রোকারেজ হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন, বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাকসুদা মিলা এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মো. জামশেদ উল ইসলাম। উল্লিখিত কর্মকর্তারা ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি থাকা ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে আল হারামাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং সেলেস্টিয়াল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের মূলধন ঘাটতি (নিট ওয়ার্থ) তদন্ত করা প্রয়োজন।

এ কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ধারা ১৭(ক) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিধিমালা, ২০২০ এর বিধিমা ৭(৪) এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন উল্লিখিত তিন কর্মকর্তাকে ব্রোকারেজ হাউজ দুটির তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নিয়োগ দিয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউজ দুইটির মোট সম্পদ মূল্য পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে মোট সম্পদ মূল্য কম থাকায় প্রতিষ্ঠান দু’টির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আল হারামাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। তবে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চলতি বছরের গত ২২ জানুয়ারি আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি এবং এনআরবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান নাসিরের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করা হয়।

একইসঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ভাই আল হারামাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওলিউর রহমান, ছেলে আল হারামাইন সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এমাদুর রহমানসহ দুই ভাতিজা আশফাকুর ও এহসানুরের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।