আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আর্থিক বছর শেষে বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হয়। বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আগে পর্যন্ত কয়েক মাস সেই অর্থ ব্যাংকে অলস পড়ে থাকে। এতে কোম্পানির চলতি মূলধন কমে যায়।

যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কোম্পানির আয়-মুনাফার ওপর পড়ে। তাই কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অলস অর্থের ব্যবহার বাড়াতে এ-সংক্রান্ত আইন সংশোনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

বিএসইসির দায়িত্বশীলরা বলছেন, বিদ্যমান আইন সংশোধন হলে পরিচালনা পর্ষদ সভায় ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের অর্থ বিতরণের আগে ব্যাংকে ফেলে রাখতে হবে না। আইনে এজিএমের একদিন আগে লভ্যাংশের টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেয়ার পর প্রয়োজনীয় নথিসহ বিষয়টি উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করতে হবে।

এর আগে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) পক্ষ থেকে বিষয়টি বিএসইসির নজরে আনা হয়। ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবরে বিএপিএলসির তৎকালীন সভাপতি ও এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামের কাছে চিঠি দেন। নগদ লভ্যাংশ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখা প্রসঙ্গে সেই চিঠিতে বিএপিএলসি জানায়, পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করার ১০ দিনের মধ্যে ওই পরিমাণ অর্থ একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হয়।

ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএমে বিনিয়োগকারীদের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত ধরা যায় না। এজিএমে বিনিয়োগকারীদের মতামতের ভিত্তিতে পর্ষদ ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে। ওই চিঠিতে এজিএমে বিনিয়োগকারীদের দ্বারা লভ্যাংশ অনুমোদনের পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে ওই লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণের অনুমতি চায় বিএপিএলসি।

বিএপিএলসির দেয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে লভ্যাংশ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন করছে বিএসইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে। তবে বিএপিএলসি এজিএমের ১০ দিন পর লভ্যাংশের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখার সুযোগ চেয়েছিল। তবে সেটি এজিএমের একদিন আগে সেটি জমা করার বিধান রেখেতে যাচ্ছে বিএসইসি।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম এ বিষয়ে বলেন, বিএপিএলসির দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে নগদ লভ্যাংশের টাকা ফেলে রাখতে হবে না। এজিএমের আগে কোম্পানি টাকা জমা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাবে। এখানে ইস্যুয়ার কোম্পানিকেই সুবিধা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থেই এজিএমের একদিন আগে টাকা জমা দিতে বলা হচ্ছে।

তালিকাভুক্তি বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ ঘোষণার পরে এজিএম অনুষ্ঠিত হতে সাধারণত ৩ মাস সময়ের ব্যবধান থাকে। দেশের পুঁজিবাজারে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে, যাদের ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের অংক অনেক বড়। ওই লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ যদি ৩ মাসের জন্য একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে অব্যবহƒত অবস্থায় রাখতে হয়, তবে তা কোম্পানির কার্যকর মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) সংকুচিত হয়। যার ফলে কোম্পানির মুনাফা, ইপিএস ও এনএভির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বিএপিএলসির মহাসচিব আমজাদ হোসেন বলেন, পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর ১০ দিনের মধ্যে পৃথক ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা দিতে হতো। আমরা এজিএমের ১০ দিন পর জমা দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। পর্ষদ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর জমা রাখলে ৩ মাস অলসভাবে পড়ে থাকে। ব্যাংকে অর্থ ফেলে রেখে লাভ নেই। অনেক কোম্পানির নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। তিন মাস তা ব্যাংকে পড়ে থাকলে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকোচিত হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ঘোষণা আসে পর্ষদ সভায়। পর্ষদ সভার ১৪ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করতে হয়। রেকর্ড ডেটের ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে এজিএম করতে হয়। ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫-এর ২৮ ধারা অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা চূড়ান্ত হয় এজিএমে।

এজিএমে লভ্যাংশ চূড়ান্ত হলে ৩০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হিসাবে পাঠাতে হয়। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পর্ষদ ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ১০ দিনের মধ্যে আলাদা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে হতো। ফলে ওই অর্থ প্রায় তিন মাসের মতো সময় ব্যাংকে পড়ে থাকত। এই নিয়মে পরিবর্তন আনার ফলে ওই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে কোম্পানি।