পুঁজিবাজারে টানা পতনে সর্বশান্তের পথে বিনিয়োগকারীরা, লেনদেনে ভাটা

শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সরকার থেকে নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর পর থেকে টানা দরপতনে খাদের কিনারে পুঁজিবাজার। ফলে সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত পতন হওয়ায় পুঁজিবাজারের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া টানা দরপতনে অনেকে আর ভরসা রাখতে পারছেনা। এ আস্থাহীনতার কারণে পুঁজিবাজার আর আগের গতি ফিরে পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিএসইসি সংস্কারের নামে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। মুলত একের পর এক জরিমানা বাজারের প্রতি মার্কেট মেকারও সাধারন বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল সিদ্ধান্ত ও বিগত সরকারের লুটপাটই অব্যাহতভাবে পুঁজিবাজারে দরপতন হওয়ার অন্যতম কারণ। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি এবং গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ফলে পুঁজিবাজারের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ থেকে বের হতে অনেক সময় লাগবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক শীর্ষ এক ব্রোকারেহ হাউজের ব্যবস্থাপনা বলেন, বর্তমান কমিশনের উপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট রয়েছে। কমিশন বাজার স্থিতিশীল না করে একের পর এক জরিমানা কারণে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ফলে কিছুটা আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর একের পর ভুলের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী বলেন, দেশের পুঁজিবাজার মানেই দর পতনের ইতিহাস। তবে যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংস্কার চলছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার আভাস মিলছে, তখন এমন দর পতন মেনে নেওয়া যায় না। অর্থনীতির বড় সংকটের মধ্যে থেকেও সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহায়তায় শ্রীলঙ্কার পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের পুঁজিবাজার উঠেছে রেকর্ড উচ্চতায়। অথচ দেশের পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা পুঁজি রক্ষায় প্রতিদিন করছেন হাপিত্যেশ।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে সূচকের সাথে কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর, টাকার পরিমানে লেনদেন। এদিন দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৭৮ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২০ টির, দর কমেছে ২১২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৪ টির। ডিএসইতে ৩৯৬ কোটি ৪২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৯ কোটি ৭ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৪৬ কোটি ১২ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩২২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২০৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬২ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২১ টির এবং ২১ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।