শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসেই দরপতনে শেষ হয়েছে। তেমনি টানা দরপতনে ফের বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের হাতে থাকা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন দরপতনে থাকায় পরও শেখ হাসিনা পতনের পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না পুঁজিবাজার। মুলত বর্তমান কমিশনের উপর আস্থা না থাকায় নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হচ্ছে না।

এছাড়া একের পর এক জরিমানা আতঙ্কে বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ঢালাও দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে এক হাজার কোটি টাকার ওপরে। সেই সঙ্গে কমেছে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে কমে গেছে লেনদেনের গতি। ফলে পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না।
এমনকি অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে দিন যত যাচ্ছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রকট হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। লোকসান কাটিয়ে উঠার কোনো পথই যেন পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। ফলে বাজার নিয়ে নতুন করে দু:চিন্তায় পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিয়ে অনিশ্চয়তা, আইএমএফের ঋণ নিয়ে আলোচনা, প্রাক-বাজেট আলোচনায় কর বাড়ার গুঞ্জন এবং সম্প্রতি জ্বালানির ৩৩ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এসব কারণেই পুঁজিবাজারে টানা কয়েক কার্যদিবস ধরে বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা কমেছে। সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ৮৪০ কোটি ২১ লাখ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ১০৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১৪৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৮৭৫পয়েন্টে। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৩৯৬ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৭ টির, দর কমেছে ২৯৯ টির এবং ২০ টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫০.২৯ পয়েন্ট বা ১.৭২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৫৯.০৭ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ১৪৯.০৫ পয়েন্ট বা ১.৬৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৬৮৫.১১ পয়েন্টে।
অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১৭.৮৭ পয়েন্ট বা ১.৬১ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ২১.১২ পয়েন্ট বা ২.২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে- এক হাজার ৯১.০১ পয়েন্টে এবং ৯২৮.৩২ পয়েন্টে। এছাড়া, সিএসই-৩০ সূচক ২১৬.৩৬ পয়েন্ট বা ১.৭৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৮১০.৬৪ পয়েন্টে।