২০১০ সালের চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পুঁজিবাজারের, নীরব ‘রক্তক্ষরণ’

শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে একের পর এক কারসাজিতে দেশের পুঁজিবাজার ছিল পতনে নিমজ্জিত। গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তদারকি সংস্থাসহ সব খাতেই সংস্কার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৬ আগস্ট থেকে টানা চার কার্যদিবস চাঙ্গাও ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীও আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে পুঁজিবাজার।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল না করে বাজার সংস্কার করছেন।
ফলে তলানিতে ঠেকেছে লেনদেন। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার আর কোরামিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারন শিবলী কমিশন কোরামিন নিয়ে পুঁজিবাজারকে বাঁচিয়ে রেখে বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করেছেন। আর যেটুকু পুঁজি ছিল গত ৮ মাসে রাশেদ মাকসুদ কমিশন বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চলছে হাহাকার আর নীরব ‘রক্তক্ষরণ’। এ যেন দেখার কেউ নেই।
মুলত রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের উপরে আস্থা নেই বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরই। যাতে করে গত ৭ কার্যদিবস ধরে টানা পতনে রয়েছে পুঁজিবাজার। এই ৭ কার্যদিবসের পতনে অসংখ্য বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে। অথচ তার পদত্যাগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মূল্যসূচক ১ হাজার বাড়বে বলে বিশ্বাস করেন বিনিয়োগকারীরা।
বিভিন্ন সময় বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, মাশরুর রিয়াজকে নিয়ে সামান্য বিতর্ক উঠতেই তিনি আর বিএসইসিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেননি। অথচ এখন সবাই মাকসুদের বিপক্ষে এবং তার পদত্যাগ চায়। কিন্তু তারপরেও নির্লজ্জ রাশেদ মাকসুদ পদত্যাগ করছেন না। এ থেকেই তার অযোগ্যতার পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব না থাকার বিষয়টিও ফুঁটে উঠেছে।
এদিকে রাশেদ মাকসুদ কমিশনের গত ৮ মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯৫ শতাংশ কোম্পানির দর কমেছে। মুনাফা তো দূরের কথা, এই সময়ে ৯৮ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীর ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পুঁজি কমে গেছে। দিনের পর দিন পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী এখন নিঃস্ব, রিক্ত। ৮ মাসে উধাও হয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।
একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, ২০১০ সালে ধসের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা দেশের পুঁজিবাজারের। গত ৮ মাসে ৯৮ শতাংশ পোর্টফোলিও পুঁজি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে গেছে। এছাড়া পুঁজিবাজারের এমন খারাপ সময় বিগত ৩০ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি। ক্রমাগত সূচক ও শেয়ারের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটছে। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বস্তির খবর দিতে পারেনি। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে স্টেকহোল্ডারসহ সবার মাঝে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজারে রক্ষক্ষরণ আর কতদিন চলবে, এর শেষ কোথায়?
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশেদ মাকসুদ কমিশনের উপর কারোরই আস্থা নেই। গত ৮ মাসে পুঁজিবাজারকে সংস্কারের নামে ধ্বস করেছে। এছাড়া একের পর এক জরিমানা করে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। এ অবস্থায় এখন কেউই রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনকে চাচ্ছেন না। এছাড়া এই কমিশন পুঁজিবাজারের কিছুই বুঝে না। যাদের পদত্যাগে পুঁজিবাজার ঘুরে দাড়ানো সম্ভব। এসব কিছু মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন জানেও। তারপরেও তারা নির্লজ্জভাবে চেয়ার আকড়ে ধরে রেখেছে।
আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা কোনো আশা দেখছেন না। আমাদের বাজারের একটি বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা নেই। যে বাজারে পুঁজির নিরাপত্তা নেই, সেখানে বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১২১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৫৯ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৪০১ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১৯ টির, দর কমেছে ২১৪ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৮ টির। ডিএসইতে ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৫৯ কোটি ৪ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৫ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১২৪ টির এবং ৩৩ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৬ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।