দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করছে একটি চক্র। ফলে মৌলভিত্তির শেয়ার উপেক্ষা করে কখনও কখনও দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। কিছুদিন বাড়ার পর আবার হঠাৎ করে অস্বাভাবিক দরপতন হচ্ছে। এর ফলে শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর সবই ছোট মূলধনের সর্বস্ব কোম্পানি। এ কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেই প্রভাবিত করা যায়। যে কারণে চক্রটি কারসাজি করতে ছোট মূলধনের দুর্বল কোম্পানিগুলো বেছে নিচ্ছে। এসব কারণে দুর্বল কোম্পানির শেয়ার কিনে বিপাকে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

তেমনি একটি কোম্পানির নাম হিমাদ্রি লিমিটেড। ফলে কারসাজির ছোঁয়ায় ৩৫ টাকার শেয়ারটি ৮ হাজার ৯৪১ টাকায় উঠে যায়। কারসাজি শেষ শেয়ারের পতন শুরু। ৮ হাজার ৯৪১ টাকার শেয়ার এখন ১ হাজার ১৯৪ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। অথচ কোম্পানিটিতে পরিশোধিত মূলধনের কয়েকগুণ সম্পদের অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি নিরীক্ষক। আর্থিক প্রতিবেদনে রয়েছে আরও অসংখ্য অভিযোগ। ফলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ অতিরঞ্জিত শেয়ারপ্রতি মুনাফাও (ইপিএস) দেখিয়েছে।

নিরীক্ষক জানিয়েছেন, হিমাদ্রির আর্থিক হিসাবে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকার অস্পর্শনীয় সম্পদ দেখানো হয়েছে। তবে নিরীক্ষক এ সম্পদের বাস্তবতা খুঁজে পায়নি। এছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই বিতর্কিত সম্পদ দেখালেও তার উপর অবচয় চার্জের পলিসি গ্রহণ করেনি এখনো। এদিকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আর্থিক হিসাবে ৪৭ লাখ টাকার ক্যাপিটাল রিজার্ভ দেখিয়েছে। এ সম্পদের সত্যতাও পায়নি নিরীক্ষক। যে সম্পদ নিয়ে কোন বিস্তারিত তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

এই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস)-৮ এর ৩৬ ধারাকে ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৭০ লাখ ৪৬ হাজার টাকার অতিরিক্ত ট্যাক্স দায়কে ইনকাম স্টেটমেন্টের পরিবর্তে সরাসরি সংরক্ষিত মুনাফার (রিটেইন আর্নিংস) সঙ্গে সমন্বয় করেছে। এর মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) ২.৬৮ টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটির ওই অর্থবছরে ইপিএস দেখানো হয়েছে ৩.৪২ টাকা। শ্রম আইনকে তোয়াক্কা করছে না হিমাদ্রি কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটিতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে (ডব্লিউপিপিএফ) ৮৩ লাখ টাকা থাকলেও তা বিতরন করেনি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক।

অথচ ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ি, ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করা এবং তা পরবর্তী ৯ মাসের কর্মীদের মধ্যে বিতরন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু হিমাদ্রি কর্তৃপক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসায় তা না করে কর্মীদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন।
মুলত ২০২১ সালে ওটিসি থেকে এসএমই মার্কেটে তালিকাভুক্ত হওয়া হিমাদ্রির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।