আলমগীর হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বুধবার বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন এর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদের চিত্র ফুটে উঠে। এসময় পুঁজি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এক বিনিয়োগকারী আর্তনাদ করে বলেন, আমাদের বাঁচান, আমাদের পুঁজি শেষ। রাশেদ মাবসুদ কমিশনের ৮ মাসে আমাদের পুঁজি শেষ হয়ে গেছে।

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কমিশনের ওপর আস্থা পাচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের অবস্থা ততই ভয়াবহ খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা কী ভাবে পুঁজি টিকিয়ে রাখবেন তা নিয়ে হা হুতাশ বাড়ছে।

তাছাড়া রাশেদ মাকসুদ কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখন আস্থা ফেরাতে পারেনি পুঁজিবাজার। বরং দিন দিন বিনিয়োগকারী কমেছে পুঁজিবাজারে। মুলত গত ১৮ আগস্ট চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন রাশেদ মাকসুদ। বরং দিন যতই যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে।

আর দৈনিক লেনদেনের ধীর গতিতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া বিএসইসি চেয়ারম্যানের নেওয়া বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে তৈরি করেছে আস্থার সংকট। তেমনি বিএসইসি এখন পর্যন্ত এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি যে সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। অন্যদিকে কোন বিনিয়োগকারী বেশি পরিমাণ শেয়ার কিনলেই বিএসইসি থেকে ফোন দিয়ে কারণ জানতে চাওয়া হয়।

পুঁজিবাজারের গত ৮ মাসের দরপতনে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কার্যত অভিভাবকহীন ছিল বিএসইসি। এসময়ে ঊর্ধ্বমুখী ছিল পুঁজিবাজার। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। লেনদেনও বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছিল। কিন্তু গত বছরের ১৯ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদ যোগদানের পর থেকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৭৭৫ পয়েন্ট থেকে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট কমে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৫০২২ পয়েন্টে। লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসে তিনশত কোটিতে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারে মূল সমস্যা আস্থা সংকট। বিশেষ করে বর্তমান বিএসইসি চেয়ারম্যানের বিতর্কিত কর্মকান্ডে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় সূচকের টানা উত্থান না হলেও আতঙ্ক কাটবে না। তাই যে কোন মূল্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে হবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ৪.০৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২২ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ০.৬৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১২১ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭.৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬৭ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ ৩০০ কোটি ৬১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার। এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ২১৪টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৬২টির।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আজ ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬ কোটি ০৭ লাখ টাকার। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির। আজ সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪.০২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১১ পয়েন্টে। আগের দিন সিএএসপিআই কমেছিল ৬৯.৮৯ পয়েন্ট।