শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহজুড়ে টানা দরপতনে ন্যুব্জ দেশের পুঁজিবাজার। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের হাহাকার ততই বাড়ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকেছে যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ মানেই লোকসান। যার ফলে পুঁজিবাজারে নজিরবিহীন অস্থিরতা বিরাজ করছে। নতুন করে বিনিয়োগ করার আস্থা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া রাশেদ মাকসুদ কমিশনের দায়িত্ব নেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখন আস্থা ফেরাতে পারেনি পুঁজিবাজার। বরং আস্থা বিনিয়োগকারীদের যেটুকু ছিল তাও সংকটে পড়েছে। ফলে দিন দিন বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

ফলে পুঁজিবাজারে গত ৮ মাসের দরপতনে বড় ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কার্যত অভিভাবকহীন ছিল বিএসইসি। এসময়ে ঊর্ধ্বমুখী ছিল পুঁজিবাজার। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে গিয়েছিল। লেনদেনও বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছিল।

কিন্তু গত বছরের ১৯ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদ যোগদানের পর থেকে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৭৭৫ পয়েন্ট থেকে ৮০৩ পয়েন্ট কমে গত বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৪৯৭২ পয়েন্টে। লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসে তিনশত কোটিতে। তবে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এসময় সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। একই সঙ্গে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) বাজার মূলধন কমেছে ১৩ হাজার ১৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তবে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১২৪.৭৩ পয়েন্ট বা ২.৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩০.৩৮ পয়েন্ট বা ১.৬২ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৪৫ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩৯.০১ পয়েন্ট বা ৩.৪১ শতাংশ কমে ১ হাজার ১০৪ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১২.৬৫ পয়েন্ট বা ১.৩৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯১২ পয়েন্টে।

জানা গেছে, বিদায়ী সপ্তাহে শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৭০ হাজার ৫৩৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৭ হাজার ৮৭ কোটি ৯ লাখ টাকা।

সপ্তাহটিতে টাকার পরিমাণে লেনদেন ১২২ কোটি ২ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭১৮ কোটি ১৮ লাখ টাকায়। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫৯৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

সপ্তাহটিতে ডিএসইর প্রধান সূচক ১২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ১০৪ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৮৪৫ পয়েন্টে। সপ্তাহটিতে ডিএসইতে ৩৯৬ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৭ টির , দর কমেছে ৩২৪ টির এবং ১৫টির শেয়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩০২.১১ পয়েন্ট বা ২.১১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৫৬.৯৬ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচক সিএসসিএক্স ১৬০.২২ পয়েন্ট বা ১.৮৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫২৪.৮৮ পয়েন্টে। অপর ২টি সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ সূচক ১৩.২ পয়েন্ট বা ১.২১ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ২৪.৫২ পয়েন্ট বা ২.৬৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে-এক হাজার ৭৭.৮১ পয়েন্টে এবং ৯০৩.৮০ পয়েন্টে।