পুঁজিবাজারে পতনের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সূচকের উত্থান হলেও লেনদেনে ভাটা

শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে টানা দরপতনের ধকল সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজার। তবে পুঁজিবাজার ঘুওে দাঁড়ালোও দীর্ঘ ৯ মাসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর রোববার ডিএসই পরিদর্শনের ঘোষণা।
সূত্র মতে, গত কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। বিশেষ করে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নিয়োগের পর থেকেই প্রধান সূচক পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে। বাজারের এ অবস্থার জন্য অনেকেই রাশেদ মাকসুদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না আসায় বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
এছাড়া দীর্ঘ ২০ বছর পর দেশের পুঁজিবাজারে আজ শনিবার লেনদেন হয়েছে। এক সময় দেশে সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি ছিল একদিন। ১৯৯৭ সালে প্রথম দুদিন (শুক্রবার ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি নির্ধারণ করা হয়। তবে ২০০১ সালে তা বাতিল করে আবার সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হয়। অবশ্য ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আবার সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করা হয়।
সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করায় দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেনেও দুদিন বন্ধ থাকে। তবে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে সরকার দীর্ঘ ছুটি দেওয়ার পাশাপাশি দুই শনিবার অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তার আলোকে আজ শনিবার সরকারি সব অফিস খোলা থাকার পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে ২০০৫ সালের পর আবারও পুঁজিবাজারে শনিবারে লেনদেনের ঘটনা ঘটলো। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন সূচক সাথে বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। তবে কমেছে টাকার পরিমানে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই পরিদর্শনের খবর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা তিনি ডিএসইর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে চলমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করবেন এবং সমাধানের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেবেন। ফলে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন একটি বিশ্বাসে বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় ছিলেন। এই মনোভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে লেনদেনের চিত্রে। আজ বাজারে বিক্রেতার তুলনায় ক্রেতার সংখ্যাই বেশি ছিল।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৮২০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৮পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৮৮ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭৭ টির, দর কমেছে ৭৯ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪০ টির। ডিএসইতে ২৬২ কোটি ৮৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৩৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৮১ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৫৮ টি কোম্পানি লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে ৭৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৫৭ টির এবং ২৭ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।