শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। কোনোভাবেই থামছে না সূচকের পয়েন্ট হারানো ও দরপতন। বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ আর ক্রন্দন। প্রতিদিনই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। ফলে টানা দরপতনে বাজার নিয়ে অনাস্থা তৈরি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

এছাড়া লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে। ব্যাংক খাতে বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি দৃশ্যমান হলেও পুঁজিবাজার যেন উল্টো পথে হাঁটছে। যার ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি হচ্ছে না। মুলত গত ৯ মাসে পুঁজিবাজার উন্নতি তো দূরের কথা, উল্টো প্রতিদিনই কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন।

ফলে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর তদারকি সংস্থাসহ সব খাতেই সংস্কার করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৬ আগস্ট থেকে টানা চার কার্যদিবস চাঙ্গাও ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীও আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই টানা দরপতনের বৃত্তে আটকে গেছে পুঁজিবাজার। এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল না করে বাজার সংস্কারের নামে আরো অস্থির করে তুলছেন।

দেখে মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার আর কোরামিন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারন শিবলী কমিশন কোরামিন নিয়ে পুঁজিবাজারকে বাঁচিয়ে রেখে বিনিয়োগকারীদের নি:স্ব করেছেন। আর যেটুকু পুঁজি ছিল গত ৯ মাসে রাশেদ মাকসুদ কমিশন বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মাঝে চলছে হাহাকার আর নীরব ‘রক্তক্ষরণ’।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে সূচকে মহামারি করোনাভাইরাসের সময়ের অবস্থায় ফিরে গেছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে।
২০১৯ সালের শেষদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর দেশের পুঁজিবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, টানা ৬৬ দিন পুঁজিবাজার বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে। করোনা মহামারির সময় দেশের পুঁজিবাজারে যেমন ভয়াবহ দর পতন দেখা গিয়েছিল, এখন আবার সেই ধরনের ভয়াবহ দরপতন দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৪১ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৭৭১ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৫ টির, দর কমেছে ২০২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৭০ টির। ডিএসইতে ২৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬৭৮ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৮৯ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১০১ টির এবং ৩১ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৬ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।