মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং পাবলিক ইস্যু রুলস এর চূড়ান্ত সুপারিশ হস্তান্তর

মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা‘ এবং ‘পাবলিক ইস্যু রুলস‘ এর বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশমালা বিএসইসি’র নিকট হস্তান্তর করেছে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিতে গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। গত সোমবার সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন ভবনে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এর নিকট সুপারিশমালা হস্তান্তর করেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার মোঃ আলী আকবর।
এছাড়া সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিয়াক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কে এ এম মাজেদুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।
পেশকৃত চূড়ান্ত সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, সকল মেয়াদি ফান্ডকে অবশ্যই ট্রাস্ট ডিডে নির্ধারিত প্রাথমিক মেয়াদ শেষে অবসায়ন করতে হবে। তবে, যদি কোনো বিশেষ সাধারণ সভায় উপস্থিত ইউনিটহোল্ডারদের তিন-চতুর্থাংশ (ইউনিটের মালিকানার শতাংশের ভিত্তিতে) ফান্ডটি ওপেন-এন্ড ফান্ডে রূপান্তরের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে উক্ত ফান্ড রূপান্তরিত হতে পারবে।
যেসব মেয়াদি ফান্ডের মেয়াদ ইতোপূর্বে বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে সংশোধিত বিধিমালার কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে একটি ইজিএম আহ্বান করতে হবে, যেখানে ইউনিটহোল্ডারদের রূপান্তরের বিষয়ে ভোট নেওয়া হবে। যদি ইউনিটহোল্ডারদের ৭৫ শতাংশ রূপান্তরের পক্ষে ভোট দেন, তাহলে ফান্ডটি রূপান্তরিত হবে; অন্যথায় উক্ত সময় থেকে তিন মাসের মধ্যে ফান্ডটি মেয়াদ শেষ বিবেচনায় অবলুপ্ত করতে হবে।
পাশাপাশি গ্রোথ, ব্যালান্সড, শরিয়াহ-অনুবর্তী, ফিক্সড ইনকাম ও মানি মার্কেট ফান্ডের জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাধ্যতামূলক সম্পদ বরাদ্দ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতায় গুরুত্বপূর্ণ যেসব পরিবর্তন এসেছে তা হলো, একক শেয়ারে বিনিয়োগের সীমা ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে এবং একক শিল্প খাতে বিনিয়োগের সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে।
সেইসাথে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোন ইক্যুইটি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা যাবে না। তবে শুধুমাত্র মেইন বোর্ডে তালিকাভুক্ত ‘এ‘ ক্যাটাগরির কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত বন্ড বা প্রেফারেন্স শেয়ারে বিনিয়োগ করা যাবে। মোট বার্ষিক ব্যয় অনুপাত সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; ফিক্সড ইনকাম অথবা মানি মার্কেট ফান্ডের ক্ষেত্রে এই হার হবে ২ শতাংশ।
মেয়াদি ফান্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট বছরে অর্জিত লাভের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে হবে। বেমেয়াদি বা ওপেন-এন্ড ফান্ডের ক্ষেত্রে, প্রতি ইউনিটে ন্যূনতম লভ্যাংশ হবে ঐ বছরের অর্জিত লাভ অথবা ভার আরোপিত গড় আয় এই দুটির মধ্যে যেটি কম তার কমপক্ষে ৩০ শতাংশ। পাবলিক ইস্যু রুলস এর বিষয়ে সংস্কার টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশে বলা হয়, আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশের ভিত্তিতে বিএসইসি চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করবে।
আইপিও বা পাবলিক ইস্যুর ক্ষেত্রে যারা নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন তাদের উপযুক্ত ও সঠিক মানদণ্ড সুপারিশমালায় দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় নিরীক্ষা কার্য এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি আইপিও ভ্যালুয়েশন বা প্রাইসিং এর জন্য সুগঠিত মডেল তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী কোম্পানিসমূহের ন্যায্য প্রাইসিং নিশ্চিত হবে। এর ফলে আগামীতে ভালো ও মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিসমূহ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে।
সেইসাথে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ইস্যু ম্যানেজারদের সুনির্দিষ্ট দায়দায়িত্ব ও ভূমিকা এর বিষয়ে সুপারিশমালায় বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে যার ফলে তাদের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে। সুপারিশমালায় ইস্যুয়ার কোম্পানিসমূহে কর্পোরেট গভর্নেন্স বা প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতের বিষয়েও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিসমূহে সুশাসন বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ অধিকতর সুরক্ষিত হবে।
এছাড়াও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশমালার আলোকে আইনী সংস্কারের প্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার কথা জানিয়েছে বিএসইসি। টাস্কফোর্সের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে বলে মনে করে পুঁজিবাজারের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।