৯ ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে বিএসইসি কমিটি

দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নেগেটিভ ইক্যুইটি, অনুমোদন ছাড়া লেনদেনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে দেশের সাতটি ব্রোকারেজ হাউজ এবং দুইটি মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট নয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে তদন্ত-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। কমিশনের জারি করা নির্দেশনায় সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে তা পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম তদন্ত প্রয়োজন। কমিশন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০-এর রুল ১৭ এবং সংশ্লিষ্ট বিধিমালার ক্ষমতা বলে এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
তদন্তে যেসব ব্রোকারেজ হাউজ রয়েছে, সেগুলো হলো: সিটি ব্রোকারেজ, শান্তা সিকিউরিটিজ, জয়তুন সিকিউরিটিজ, ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ, কেএইচবি সিকিউরিটিজ, কর্ডিয়াল সিকিউরিটিজ ও ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ। আর মার্চেন্ট ব্যাংক দু’টি হলো: আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট।
কমিশনের আদেশ অনুযায়ী, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আদেশ জারির তারিখ থেকে পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে বিএসইসিতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। সেই সঙ্গে দুইটি হার্ড কপি ও একটি সফট কপি জমা দিতে হবে।
তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকের স্টক ব্রোকার, স্টক ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছে কি-না তা মূল্যায়ন করবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদনহীন লেনদেন, নেতিবাচক ইক্যুইটি, মার্জিন অ্যাকাউন্টে প্রভিশন ঘাটতি, বিও হিসাবের তথ্যসহ নানা বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা করবে।
এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকের বড় গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে লেনদেন, ব্লক ট্রেড, নগদ এবং ব্যাংক লেনদেন, অ্যাকাউন্ট বই, অভিযোগের রেকর্ড ও পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত করা হবে। তদন্তের আওতায় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ হওয়া হিসাব অনুযায়ী মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত ব্যবস্থা এএমএল/সিএফটি সিস্টেমও মূল্যায়ন করবে কমিটি।
বিএসইসি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যক্রমে সুশাসন নিশ্চিতে এটি একটি নিয়মিত ও কৌশলগত উদ্যোগ। প্রয়োজনে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এদিকে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে সার্বিক কার্যক্রম তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। সেই সঙ্গে বড় গ্রাহক, ব্লক ও একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন, নগদ ও ব্যাংক হিসাব এবং প্রতিষ্ঠানের এমডি, সিইওসহ অন্যান্যদের ভূমিকাসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন: জয়তুন সিকিউরিটিজের জন্য বিএসইসির যুগ্ম-পরিচালক সুলতানা পারভীন, সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও লামিয়া আখতার; সিটি ব্রোকারেজের জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক আব্দুস সেলিম, সহকারী পরিচালক মো. শাকিল আহমেদ ও মো. ফয়সাল ইসলাম; ন্যাশনাল সিকিউরিটিজের জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক এস এম আহসানুল কবির , সহকারী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান ও সারা তাসনুভা।
এছাড়া, শান্তা সিকিউরিটিজের জন্য বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, সহকারী পরিচালক মিথুন চন্দ্র নাথ ও শাকিলা সুলতানা; কেএইচবি সিকিউরিটিজের জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম ও মো. কামাল হোসেন; কর্ডিয়াল সিকিউরিটিজের জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মো. আব্দুস সেলিম, সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. হাসান;
ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক সানজিদা রহমান ও মাহমুদুর রহমান; আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের জন্য বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক অনু দে, সহকারী পরিচালক সৌভর মল্লিক ও ফারহান ওয়ালিজা; প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্টের জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক রানা দাস ও শাকিলা সুলতানা।
গঠিত তদন্ত কমিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর স্টক-ব্রোকার এবং স্টক-ডিলারের সামগ্রিক কার্যাবলী খতিয়ে দেখবে। সেখানে কোনো অসঙ্গতি ঘটেছে কি-না তা যাচাই-বাছাই করবে। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলে সেটাও চিহ্নিত করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকারের সামগ্রিক কার্যাবলী পরীক্ষা (মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম, হিসাব বই, রেকর্ড, অভিযোগ ইত্যাদি); মার্চেন্ট ব্যাংকারে শীর্ষ ক্লায়েন্টদের লেনদেন, ব্লক ট্রেড, সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন, নগদ এবং ব্যাংক লেনদেন পরীক্ষা; মার্চেন্ট ব্যাংকারের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কমপ্লায়েন্স অফিসারের ভূমিকা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়নসহ এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।
একইসঙ্গে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী গঠিত তদন্ত কমিটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ হওয়া সময়ের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর এএমএল/সিএফটি (অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং/কাউন্টার-টেরোরিজম ফাইন্যান্সিং) সিস্টেম চেক করবে।