বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ভূতের আক্রমণের রহস্য কী

দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: লোক সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে ভূতের পা নাকি সবসময় পিছনে যায়। ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেরও ঠিক একই অবস্থা। ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত পুঁজিবাজারে কোন নিয়ন্ত্রণকারী না থাকা অবস্থায় বিনিয়োগ কারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও আস্থারফলে সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পায়।
পরবর্তীতে ৮ আগস্ট ডক্টর ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর পুঁজিবাজারের অগ্রগতি ভুতের ন্যায় পিছনের দিকে পরিচালিত হচ্ছে। একটি দেশের অর্থনীতির প্রাণ বা চালিকা শক্তি হলো পুঁজিবাজার এবং মুদ্রা বাজার। হাসিনা সরকারের দুঃশাসন আমাদের পুঁজিবাজার এবং মুদ্রা বাজার কে তছনছ করে দেয়।
ডক্টর ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মুদ্রা বাজারের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কর্তৃক যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে মুদ্রা বাজার তথা ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মুদ্রা বাজার কে গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন অর্থ ছাপিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে সরবরাহ করেন।
বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের মাধ্যমেও আমাদের মুদ্রা বাজার শক্তিশালী হতে থাকে, তথাপি বিশ্ব ব্যাংক সহ বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠী হতে প্রাপ্ত ঋণ আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরো সংহত করে। এই কৃতিত্বেরএকমাত্র দাবিদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডক্টর আহসান এইচ মনসুর। অথচ তার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আইসিবিকে ৪ শতাংশ সুদে প্রদত্ত তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ হতে আহসান এইচ মনসুর পুনরায় আইসিবিকে ঋণ পরিশোধের নামে মুদ্রা বাজারে দুই হাজার কোটি টাকা ফেরত দিতে হয়, উপরন্তু পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোক্তা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক কর্তৃক তাদের অংশের একটা শেয়ার বিক্রি করে দেয়, যা পুঁজিবাজারে তারল্য সংকটের সৃষ্টি করে।
প্রকারান্তরে মুদ্রা বাজার তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুঁজিবাজারে প্রয়োজন তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করা। অথচ বর্তমান কমিশন তা না করে ভূত যেরকম পিছনে হাটে সেইরকম হাঁটছেন। বর্তমান কমিশন পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি না করে তারল্য সংকট সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধির একমাত্র উপায় হল মিউচুয়াল ফান্ড সেক্টরের উন্নয়ন এবং উন্নতি।
পুঁজিবাজার সংস্কার বিষয়ক সংস্কার কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড সমূহের সংস্কার বাস্তবায়ন না করে বর্তমান কমিশন তারল্য প্রবাহ সৃষ্টিতে বাধা প্রদান করছেন। অথচ বর্তমান কমিশন বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিঃ এর রাইট শেয়ার অনুমোদনের মাধ্যমে বাজারে তারল্য সংকট সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান করছেন।
এখানে উল্লেখ্য বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের রাইট শেয়ারের প্রদত্ত টাকা নিশ্চয়ই বিনিয়োগকারীদেরকে পুঁজিবাজার হতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং এই টাকা পুঁজিবাজার হতে বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিঃ এর মাধ্যমে আবার মুদ্রা বাজারে চলে যাবে। কিন্তু বর্তমান কমিশন রেনেটা লিমিটেডকে কনভার্টবল প্রেফারেন্স শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন প্রদানের মাধ্যমে তারল্য সংকট আরো গভীর করার কাজে লিপ্ত আছেন।
এই মুহূর্তে যদি দ্রুততার সাথে পুঁজিবাজার সংস্কার বিষয়ক কমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড সমূহের সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়ন করা না হয় তাহলে পুঁজিবাজার আরো গভীর সংকটে পতিত হবে। কিন্তু এই সংস্কার সমূহ বাস্তবায়নে বিএসইসির কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
তাই গত সপ্তাহে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সূচকের যতই বৃদ্ধি হোক না কেন সামনের দিনগুলিতে তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং যথেষ্ট সন্দেহ বিদ্যমান। কারণ মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড সমুহের সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ন্যূনতম ছয় মাস থেকে আট মাস সময়ের প্রয়োজন।
সম্ভাব্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি ঈদের পূর্বে হয় তাহলে বর্তমান কমিশন এই সংস্কার আর বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, তাই বিএসইসিকে অনুরোধ করবো যে আপনারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের ন্যায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের পুঁজিবাজারকে ভূতের হাত থেকে রক্ষা করুন। সুলাইমান রুবেল, বিনিয়োগকারী।