ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম বিনিয়োগ সীমা নামল এক-তৃতীয়াংশে
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সরকারের সুদব্যয় কমিয়ে আনতে এবার ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগ সীমা এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এখন থেকে এ স্কিমের আওতায় একজন বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন, যা আগে ছিল ৩০ লাখ টাকা। সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ স্কিমের আওতায় যৌথভাবে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যাবে, যা আগে ছিল ৬০ লাখ টাকা। ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে সাধারণত মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী ও নারীরাই আমানত রাখেন। বিনিয়োগ সীমা কমে যাওয়ায় এখন তাদের আয়ের উৎস সংকুচিত হলো।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যা গতকাল প্রকাশ পেয়েছে। প্রজ্ঞাপনে তারিখ দেওয়া রয়েছে ২০ মে এবং ওইদিন থেকেই তা কার্যকর বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন…….
ছয় ইস্যুতে ভারতের প্রতি চড়াও চীন
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংক ও অন্যান্য স্কিমের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যক্তির পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানও ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে আমানত রাখছে। এছাড়া অনেকে অবৈধ ও কালো টাকা বৈধ করার জন্যও এ মাধ্যমটি ব্যবহার করতে থাকে। এতে করে ব্যাংক খাতে তারল্য প্রবাহ কমছে। পাশাপাশি সরকারের সুদব্যয়ও বাড়ছে। সরকারের সুদব্যয় নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যেই এ স্কিমের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বেঁধে দেওয়া থাকলেও ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের আওতায় টাকা জমা রাখায় কোনো শর্ত ছিল না। ফলে সব শ্রেণি-পেশার বাংলাদেশি নাগরিকের পক্ষে টাকা রাখার সুযোগ ছিল। তবে এ স্কিমের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে দেওয়ায় মধ্যবিত্ত ও অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবীরা, যারা এ স্কিমের ওপর নির্ভর করে সংসার খরচ চালাতেন, তারা বিপাকে পড়বেন। তাদের এখন নিরাপদ বিনিয়োগের বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।
আরও পড়ুন…….
কেরানীগঞ্জে ৭০ বছর বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে গেল সন্তান, বৃষ্টিতে ভিজলেন মা
এর আগে ব্যাংক ও অন্যান্য স্কিমের সুদহারের সঙ্গে সমন্বয় করতে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদের হার প্রায় অর্ধেক কমিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তবে সমালোচনার মুখে আগের হার ঠিক রেখে নতুন আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যা ১৭ মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়। এরপরই বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করে নতুন এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর পরিচালিত বিভিন্ন ধরনের স্কিমে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সরকারের মোট দায় রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সাধারণ হিসাব ও মেয়াদি হিসাব মিলিয়ে পুঞ্জীভূত দায় ৩৯ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে মেয়াদি হিসাবে রয়েছে ৩৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। আর সাধারণ হিসাবে ২ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।
ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের (সাধারণ হিসাব) ক্ষেত্রে মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ। আর তিন বছরমেয়াদি হিসাবের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে মেয়াদ পূর্তির আগে ভাঙানোর ক্ষেত্রে এক বছরের জন্য মুনাফা ১০ দশমিক ২ শতাংশ। দুই বছরের জন্য ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ নেমে আসায় সঞ্চয়ী জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ ঝোঁক বাড়তে দেখা গেছে। ফলে এ খাতে সরকারের সুদবাবদ ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে।
যদিও এখন সরকার ব্যয়বহুল সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের পরিবর্তে ব্যাংক খাত থেকে বেশি ঋণ গ্রহণ করছে। চলতি অর্থবছরের ১৩ মে পর্যন্ত বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকগুলো থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭১ শতাংশ বেশি।