বাজেট পরবর্তী পুঁজিবাজার নিয়ে আশাহত বিনিয়োগকারীরা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। বর্তমানের চলমান সংকট ও অস্থিরতা দূর করতে অতীতের অন্য সময়গুলোর চেয়ে এবারের বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হলেও এর কোন প্রতিফলন নেই পুঁজিবাজারে। আজ সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচকের নিন্মমুখী প্রবনতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে সূচক কমলেও লেনদেন কিছুটা বাড়ছে।
তবে বাজেট-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তির সাথে মিল নেই। ফলে আ হশাহত হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন বাজার কি বরাবরের মতো এখন সিন্ডিকেট চক্রের দখলে। সরকার যেখানে পুঁজিবাজার ভাল করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন সেখানে আজ সূচক ও লেনদেন না বাড়ার কারন কি। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল আজ লেনদেন ১০০ কোটি উপরে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের মতো লেনদেন হয়েছে।
এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করে ২০২০-২১ অর্থবছরের শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্তানুযায়ী কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে সেই অর্থ তিন বছরের মধ্যে প্রত্যাহার করা যাবে না তথা লক-ইন থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজারকে গতিশীল করার জন্য তিন বছর লক-ইনসহ কিছু শর্তসাপেক্ষে আগামী অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করে বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদান করলে, আয়কর কর্তৃপক্ষসহ কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এদিকে করোনাভাইরাসে সৃষ্ট মহামারিতে পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে উৎসে কর সমন্বয় করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে একটি শক্তিশালী বন্ড মার্কেট বিকাশের জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর আলোকে বন্ড লেনদেন মূল্যের ওপর উৎসে কর কর্তনের পরিবর্তে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক লেনদেনে নির্ধারিত কমিশনের ওপর উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি। এছাড়া বন্ডের সুদ ও বাট্টার ওপর উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করে সুদ ও বাট্টা পরিশোধকালে উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি।
আরও পড়ুন…….
এতে পুঁজিবাজারে বন্ডের লেনদেন বৃদ্ধি পাবে।’ এর বাইরে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য বাজেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি এবারের বাজেটে লভ্যাংশ আয়ের ওপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য কিছু কর সুবিধা প্রদানসহ আরও কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এ পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী শিমুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব। তারপরও দেখবেন একটি শ্রেনী বাজেট নিয়ে নানা নেতিবাচক প্রচারনা চালাচ্ছে। নেতিবাচক মন্তব্য করে লাভ নেই। বাজার এখন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সরকার পুঁজিবাজার নিয়ে আন্তরিক। আশা করি কয়েকটা দিন গেলে বাজার স্বাভাবিক গতিতে চলতে শুরু করবে।
তিনি আরো বলেন, বাজেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তারা যদি এই অর্থ নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করে তাহলে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবেই। আর তারা যদি হাত গুটিয়ে বসে থাকেন তাহলে বাজার চিত্র বদলাবে না। কারণ পুঁজিবাজারের প্রধান শক্তি হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। যে কোনো পরিস্থিতিতে তারাই বাজারকে সাপোর্ট দিতে পারেন।
মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আবুল কাশেম বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন স্বপ্ন দেখছি। আসলে কবে সেই স্বপ্ন মিলবে। আশা করি প্রস্তাবিত বাজেটর প্রভাব খুব শিগরিই বাজারে পড়বে। বাজার নিয়ে আশাবাদী। তবে আজকে লেনদেন বাড়া দরকার ছিল বলে তিনি মনে করেন।
এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী হোসাইন আলী কাজী বলেন, সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করলে এবার বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব। আসলে বাজেট কোন বিষয় নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হলে বাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।