বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে ব্যাংক খাতে মুনাফায় উল্লম্ফনের সম্ভাবনা!
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চলতি বছর ২০২১ সালে মাত্র ২৫ শতাংশ পরিশোধ করে নিয়মিত দেখানো ঋণের বিপরীতেও পুরো সুদ আয় খাতে নিতে পারবে ব্যাংক। করোনার মধ্যে ব্যাংকগুলোর আয় বেশি দেখানোর বিশেষ এই সুবিধা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুলত খেলাপি ঋণ কমাতে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এবার ব্যাংকগুলোর জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছর মাত্র ২৫ শতাংশ পরিশোধ করে নিয়মিত দেখানো ঋণের বিপরীতেও পুরো সুদ আয়খাতে নিতে পারবে ব্যাংক। তবে বিশেষ সুবিধায় নিয়মিত দেখানো এ ঋণের বিপরীতে অতিরিক্ত ২ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
তবে ব্যাংকের সুদকে আয় হিসেবে দেখাতে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে ২০২১ সালে যে সুদ আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে তার ২৫ শতাংশ যদি আদায় করতে পারে তাহলে ওই গ্রাহকের কাছ থেকে সুদ বাবদ পাওয়া অর্থের পুরোটাকে আয় হিসেবে দেখাতে পারবে। এতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা বাড়বে।
যদিও বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে লক্ষ্যের শতভাগ ঋণ আদায় হলেই তখন পুরো সুদকে আয় হিসেবে দেখাতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠিয়েছে।
ব্যাংকখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের ফলে চলতি বছর শেষে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটতে পারে। তবে এ সুবিধা নিতে বাড়তি ২ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরের বার্ষিক আর্থিক হিসাব চূড়ান্তের সময় ব্যাংকগুলোকে এই নির্দেশনা মানতে হবে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক বছর শেষ হবে চলতি ডিসেম্বরে।
বাংলাদেশ বাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধের সূচি ছিল, তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলে ওই গ্রাহককে আর খেলাপি করা যাবে না। পাশাপাশি ওই গ্রাহক থেকে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যাবে, তা ব্যাংকগুলো আয় হিসেবে দেখাতে পারবে। তবে ঋণ আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আদায় না হলে সেই গ্রাহককে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে, সুদও আয় খাতে নেওয়া যাবে না।
এছাড়া এই সুবিধা নেওয়া ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত ২ শতাংশ নিরাপত্তা সাধারণ সঞ্চিতি রাখতে হবে। সাধারণত সব ঋণের ওপর ব্যাংকগুলোকে ১ শতাংশ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। আর নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয় ব্যাংকের মুনাফা থেকে। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, যেসব ঋণ এরই মধ্যে নগদ আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয় হয়েছে, তার বিপরীতে রক্ষিত নিরাপত্তা সঞ্চিতি থেকে ১ শতাংশ আয় হিসেবে দেখানো যাবে। ভবিষ্যতে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি সুদৃঢ় রাখা এবং ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তারা (সিএফও) বলছেন, নতুন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা করা সহজ হলো। কারণ, সাধারণত পুরো টাকা আদায় না হলে তা খেলাপি হয়ে যায়। সুদও আয় খাতে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত বছরে করোনা শুরু হলে ঋণ পরিশোধ না করলেও খেলাপি না করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংকগুলো যাতে লোকসানে না পরে সে জন্য নানা ধরনের সুবিধাও দেওয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। এবার উচ্চ মুনাফা করার সুযোগ দিল।