পুঁজিবাজারের জন্য একগুচ্ছ করছাড় সুবিধা বিএমবিএ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের জন্য একগুচ্ছ করছাড় সুবিধা চেয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)। গত বুধবার এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। পুঁজিবাজার সহায়ক বিনিয়োগবান্ধব কর কাঠামো নির্ধারণ করা হলে কর আদায় বাড়বে বলে মনে করছে বিএমবিএ।
বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মো. রিয়াদ মতিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের পরিধি ও গভীরতা বাড়ানো গেলে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হতে পারে। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবতার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ করা প্রয়োজন। দেশের পুঁজিবাজারে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। তাই যেকোনো ধরনের পরিবর্তনের ফলে এসব বিনিয়োগকারীর মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার।
পুঁজিবাজার সহায়ক বিনিয়োগবান্ধব কর কাঠামো নির্ধারণ করা হলে কর আদায় বাড়বে, কমবে না উল্লেখ করে বিএমবিএ বলছে, এজন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে নীতিনির্ধারণ। পুঁজিবাজারকে গতিশীল করে সার্বিক অর্থনীতি ইতিবাচক রাখার জন্য বেশকিছু প্রস্তাব বিবেচনার জন্য এনবিআরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহার করা।
এ বিষয়ে বিএমবিএর বক্তব্য হচ্ছে কোম্পানি করপোরেট কর পরিশোধের পর লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। ফলে সে লভ্যাংশ থেকে আবার উচ্চহারে কর কেটে রাখা দ্বৈত করের শামিল। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ নেয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহার করা খুবই জরুরি।
তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিএমবিএ। বর্তমানে এ করের ব্যবধান ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ হওয়ায় তা কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করতে পারছে না। তাই সংগঠনটির পক্ষ থেকে কর না কমিয়ে শুধু তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ব্যবধান বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা করা হলে ভালো ও বড় কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখাবে।
বন্ড বাজারকে গতিশীল করা বা বিনিয়োগে উৎসাহিত করার জন্য কর কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠনটি। এক্ষেত্রে বন্ড থেকে আয়ের ওপর বিশেষ রেটে ৫ শতাংশ কর আরোপ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এটা করা হলে বন্ডে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হবেন বলে মনে করছে বিএমবিএ। সংগঠনটি লেনদেনের ওপর করহার দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক শূন্য ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এতে বাজারে লেনদেন ও সরকারের কর আদায় বাড়বে বলে মনে করছে তারা।
বিএমবিএ মনে করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়কর নিষ্পত্তি সহজকরণ করা প্রয়োজন। আর মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে পলিসি দরকার। পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ করমুক্ত করা প্রয়োজন বলেও মনে করে সংগঠনটি। এছাড়া বহুজাতিক, সরকারি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার জন্য ব্যবসার আকার বা ঋণের আকার কিংবা পুঁজির আকারের ভিত্তিতে পলিসি করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএমবিএ। কেননা সংগঠনটির মতে যত বেশি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে, সরকার তত বেশি কর পাবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএমবিএ। এটা করা হলে বড় কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্তির জন্য আগ্রহী হবে। এছাড়া ট্রেডিং গেইন ও ক্যাপিটাল গেইনকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছে সংগঠনটি। তাহলে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমবিএর প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে যাতে ভালো কোম্পানিগুলো তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীরা উদ্বুদ্ধ হয়, সেজন্য এসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।