লক্ষ্মীপুরে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গুলি করে হত্যা
দেশ প্রতিক্ষণ, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার রাত পৌনে ১০টার দিকে জেলার সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে পোদ্দার বাজার নাগেরহাট সড়কে হাঁটছিলেন নোমান ও রাকিব। এ সময় আকস্মিক মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে এসে তাদের আক্রমণ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্বৃত্তরা তাদের মাথায় গুলি করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে পথচারীরা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে নোমান মারা যান। অপর আহত রাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকায় পাঠান। পরে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান।
নোমানের স্বজনরা জানান, নোমানের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। বিগত ইউপি নির্বাচনে তার বড় ভাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার জেরে প্রতিদ্বন্দ্বী পরাজিত প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জেহাদীর সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল।
স্বজনদের দাবি, এলাকায় অনেক আগে থেকেই জেহাদী বাহিনী সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলছে। তার নামে গড়ে ওঠা জেহাদী বাহিনী পুলিশের কাছে চিহ্নিত। ইউপি নির্বাচনের পর থেকেই জেহাদী ও তার বাহিনীর সদস্যরা নোমান ও তার ভাইকে মেরে ফেলার একাধিকবার হুমকি দিয়েছে।
এই ঘটনায় বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কাশেম জেহাদীকে দায়ী করেছে ইউনিয়নটির বর্তমান চেয়ারম্যান ও নোমানের বড় ভাই মাহফুজুর রহমান। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। তবে এ ব্যাপারে আবুল কাশেম জেহাদীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নোমানের মরদেহ জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেন নোমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নোমানকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আর গুলিবিদ্ধ রাকিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তাদের দুজনের মাথা এবং মুখে গুলির আঘাত রয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ সুপার মাহাফুজ্জামান আশরাফ রাতেই সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মাহাফুজ্জামান বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে তৎপর রয়েছে।
স্থানীয় দত্তপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (উপপরিদর্শক) ইকতার হোসেন বলেন, পোদ্দার বাজার-নাগেরহাট সড়কে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যদিকে দুই নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দত্তপাড়া এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপু, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম রকি, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনসহ দলের নেতারা। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।