হঠাৎ পাহাড়ি অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার কারণ কী?
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের কারণে সাঙ্গু আর মাতামুহুরি নদী উপচে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি আর কক্সবাজারের বহু অঞ্চল তলিয়ে গেছে। এর আগে এমন বন্য আর দেখা যায়নি। সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদী যেসব এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে, তার আশেপাশের সব এলাকাই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে।
বান্দরবাননে সাব-স্টেশনগুলোয় পানি ঢুকে পড়ায় গত তিনদিন ধরে শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। চার্জ দিতে না পারায় সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জানা যায়, লামা উপজেলায় বিগত দিনে সবচেয়ে বড় বন্যা দেখা গিয়েছিল ১৯৮৭ ও ১৯৯৭ সালে। এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ১৯৮৭ সালের বন্যার চেয়ে এবার সাড়ে ৩ ফুট পানি বেশি উঠেছে। চার দিনের স্থায়ী বন্যায় সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল ৭ আগস্ট। ওই দিন মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ১১.৯৬ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে ৬ ফুট উঁচু হয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে বহু মানুষের ঘর বাড়ি, গরু, ছাগল ভেসে গেছে। বাড়ির ছাদে আটকে থাকা অনেক পরিবারকে টিন কেটে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় প্রত্যেক ব্যবসায়ী।
স্থানীয়রা জানান, পানি ঘরের ভিতর ঢুকে গেছে। অনেকেই খাটের নিচে ইট দিয়ে উঁচু করে ঘরের মধ্যেই রয়েছে। বাইরে বের হওয়ারও কোনো সুযোগ নাই। আশেপাশের বহু মানুষ যেভাবে পারছে, অন্যদিকে চলে গেছে। তবে আশার কথা হলো এসব এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও উন্নতি হবে।
হঠাৎ করে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এরকম বন্যার পেছনে কারণ কী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যার পেছনে মূল কারণ হলো গত কয়েকদিনের বৃষ্টি। সাধারণত পুরো অগাস্ট মাসে বান্দরবানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় গড়ে সাড়ে ৪০০ মিলিমিটার। কিন্তু গত চার দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮০০ মিলিমিটারের বেশি। অধিক বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাতামুহুরি এবং সাঙ্গু নদীর স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা পার হয়ে গেছে, যে কারণে এই বন্যা দেখা দিয়েছে।
অপর দিকে পাহাড়ের ঢল এবং বৃষ্টির পানি এক সঙ্গে নদীতে নামতে গিয়ে তা উপচে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে যেসব এলাকা দিয়ে এই দুটি নদী প্রবাহিত হয়েছে, তার আশেপাশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে।
এসব ছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ দেখছেন বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয়রা। তারা বলছে, প্রতিবছরই নানা কারণে বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি বহন করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে অতীতে এসব নদী যে পরিমাণ পানি বহন করতে পারতো, সেটা হারিয়ে ফেলছে। ফলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হলে বা নদীতে পানি বেড়ে গেলে সহজেই আশেপাশের এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে।
কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত ৬০টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বান্দরবানে বন্যার শিকার হয়েছে ২১ হাজারের বেশি মানুষ। সেখানে এ পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে।