দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা দেশের পুঁজিবাজারের। মাঝে মধ্যে কিছুদিন ঘুরে দাঁড়ালেও ফের পুঁজিবাজারে চলছে অব্যাহত দরপতন। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন পুঁজিবাজার ‘উন্নয়নে’ ডিএসই’র সিরিজ বৈঠকের ফলাফল কী। গত তিন কার্যদিবস ধরে ডিএসই সিও ফেরাম, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ডিবিএর সাথে সিরিজ বৈঠক করেছে।

বৈঠকের পরও চার কার্যদিবসে ডিএসইতে ১৭৯ পয়েন্ট সূচকের উধাও হয়েছে। এখন বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন এসব বৈঠক করে কী লাভ। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে বিনিয়োগকারীদের মাঝে আস্থা ফেরাতে হবে। বর্তমান পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট দুর করতে হবে। তা না হলেও বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে না।

কারণ পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো ও ‘উন্নয়নের’ জন্য ধারাবাহিকভাবে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে গত তিন কার্যদিবসে মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংগঠনের সঙ্গে ডিএসইর বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকের পরই পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আশার কথা জানিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটি। তবে দরপতনের প্রবণতা থেকে বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার সিইও ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করে ডিএসই। ওই বৈঠকে ডিএসই চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানটির এমডিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। আর সিইও ফোরামের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান। ঐদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে অবস্থান নেয় ৫ হাজার ৬৬৬ পয়েন্ট।

ঐদিনই ঘোষণা দেওয়া হয় পরদিন মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসিয়োয়েশনের (বিএমবিএ) সঙ্গে বৈঠক করবে ডিএসই। বৈঠকটি শুরুর আগেই সপ্তাহের বড় পতনটির সাক্ষী হয় বিনিয়োগকারীরা। প্রধান মূল্যসূচকটি কমে ৮১ পয়েন্ট উধাও হয়ে যায়।

এরপর গত বুধবার ডিএসই কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসে ব্রোকার হাউজের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সঙ্গে। প্রথম দুটি বৈঠক রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসইর নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলেও তৃতীয় বৈঠকটি হয় মতিঝিল কার্যালয়ে। এই বৈঠকের দিনও বড় পতন হয় পুঁজিবাজারে। এদিন ডিএসইএক্স ৫৮ পয়েন্ট পয়েন্ট সূচক উধাও হয়ে যায়। দিনশেষে সূচকটির অবস্থান ছিলো ৫ হাজার ৫২৭ পয়েন্টে।

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এমন আলোচনা বছরের পর বছর ধরে চললেও বাজারে তার ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যায় না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এ ধরনের আলোচনায় প্রায়ই করে। এতে স্টেক হোল্ডাররা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন, বিএসইসি ও ডিএসই দিক নির্দেশনা দেয়। কিন্তু পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা আর ফেরে না।

বিষয়টি নিয়ে একটি ব্রোকার হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলোচনার মধ্যে একপক্ষ অন্য পক্ষের প্রশংসা করে, চা-নাস্তা খায় এরপর ব্রিফিং করে। ফলাফল মিডিয়া কাভারেজ হয়। এর বেশি কিছু আজ পর্যন্ত হয়নি।

তিনি বলেন, এসব আলোচনা দিয়ে বাজারের ইতিবাচক পরিবর্তন কতোটা হবে জানি না। তবে পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল করতে হলে ভালো কোম্পানি লিস্টিং করতে হবে। তারল্য ও সুশাসন বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় সকল আলোচনা ব্যর্থ বলে আমি মনে করি।

তবে ধারাবাহিক আলোচনার কারণে পুঁজিবাজারের পতন হচ্ছে বলে মনে করেন না ডিএসই চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু। ডিবিএ’র সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার জন্য বাজারে পতন হবে এটা কখনো আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা সবসময়ই চাই পুঁজিবাজার ভালো হোক। আর এ কারণেই স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করি। পতনের কারণ খুঁজি এবং তা সমাধানের চেষ্টা করি।