পুঁজিবাজারে পাঁচ কার্যদিবসে ২ হাজার ১৮৮ জন বিনিয়োগকারীর বিও খালি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের টানা দরপতনে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। অস্থিরতা থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার। ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে অজানা আতঙ্কে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। গত সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে আরও ২ হাজার ১৮৮ জন বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। তার বিপরীতে অবশ্য গত সপ্তাহে ২ হাজার ১২৬ জন বিনিয়োগকারী নতুন করে বাজারে যুক্ত হয়েছেন।
ফলে যত বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন, তার সমপরিমাণ বিনিয়োগকারী নতুন করে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খুলে বাজারে যুক্ত হয়েছেন। এর আগের সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে ৫ হাজার ৩৫৫ জন বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছিলেন। সেই তুলনায় গত সপ্তাহে বাজার ছেড়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে অর্ধেকে নেমেছে।
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়ার ধারণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫০টি। সপ্তাহ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৮টিতে। অর্থাৎ সপ্তাহের ৫ কার্যদিবসে ২ হাজার ১৮৮ জন বিনিয়োগকারী তাঁদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কমেছে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা। গত সপ্তাহ শেষে পুঁজিবাজারে সক্রিয় তথা শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ১৫২টিতে। আগের সপ্তাহে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৫টিতে। শেয়ারবাজারে যেসব বিও হিসাবে শেয়ার থাকে, সেগুলোকেই মূলত সক্রিয় বিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলতে থাকায় বাজার ছেড়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার দিনই বাজারে সূচক কমেছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহ শেষে ১৪৪ পয়েন্ট বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে।
গত তিন বছরের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সবশেষ ২০২১ সালের ৩ মে ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৫১১ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে ২০ শতাংশের বেশি। গত সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারের দৈনিক গড় লেনদেন ১৯৭ কোটি টাকা কমে নেমে এসেছে ৭৬৪ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহে এ বাজারের দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৯৬১ কোটি টাকায়।
একদিকে বাজার পড়ছে, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। কেন এ প্রবণতা, জানতে চাইলে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, আগামী বাজেটে শেয়ারবাজারে মূলধনী মুনাফার ওপর করারোপের পরিকল্পনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত এনবিআরের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। মূলধনী মুনাফার ওপর করারোপের এ পরিকল্পনাটি সামনে আসায় শেয়ারবাজারে আরও বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, এমনিতেই বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মন্দাভাব চলছে। তার মধ্যে মূলধনী মুনাফার ওপর করারোপের এ পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরিয়েছে।