দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সিকিউরিটিজের বিনিয়োগ সীমা বৃদ্ধির পরও থামছে না পুঁজিবাজারে টানা দরপতন। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে টানা দরপতনের মধ্যে দিয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন শেষ হয়েছে। ফলে দিন যতই যাচ্ছে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট ততই বেড়েছে।

যার ফলে পুঁজিবাজারের প্রতি অনাহী হয়ে বাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা। আর টানা দরপতনে অভিবাভকহীন শুন্য পুঁজিবাজার। কারণ পুঁজিবাজারে টানা পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি পুঁজিবাজার গতিশীল করতে আইসিবির ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) হচ্ছে। সিকিউরিটিজ কেনার সীমা ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে এর কোন প্রভাব নেই পুঁজিবাজারে। ফলে বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন কোন পথে হাটছে দেশের পুঁজিবাজার। পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত কী। ব্যাংক- ফাইন্যান্সের মত পুঁজিবাজার কী ন্যুয়ে পড়লো। এর থেকে উত্তরনের উপায় কী।

এছাড়া বিএসইসির কোনো উদ্যোগই বাজারে পতন ঠেকাতে কার্যকর হচ্ছে না। কিছুদিন পরপর অনিয়ন্ত্রিত উত্থান পতন বাজার নিয়ন্ত্রণে বিএসইসির ব্যর্থতাকে বারবার সামনে নিয়ে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার পাশাপাশি সংস্থাটি কারসাজি রোধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, ঘন ঘন নীতির পরিবর্তনে পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের। গুজব আর ফোর্স সেলও চরমভাবে ক্ষতি করছে পুঁজিবাজারকে। পুঁজিবাজারের এমন ধস ৯৬ ও ২০১০ সালেও দেখিনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশ^াসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা পথের ফকির হয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তারা । এভাবে চলতে থাকলে এ বাজারে কেউ বিনিয়োগ করতে আসবে না।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যেখানে ব্যর্থ হয়েছে। সেখানে কী ভাবে নারী বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজার মুখী করতে চায়। আমাদের মত পুরুষ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ঠিক থাকতে পারছি না। সেখানে নারী বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকির মধ্যে কী ভাবে বিনিয়োগ করবে। আর নারী বিনিয়োগকারীরা কখনো ঝুঁকির মধ্যে বিনিয়োগ করে না বলে তারা জানান।

বাজার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়েছে যে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি লোকসানের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও কারসাজি চক্র শেয়ার বিক্রি করে বাজার অস্থিতিশীল করছে।

এদিকে সপ্তাহজুড়ে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) দরপতন হয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহজুড়ে সূচক ও লেনদেনের সঙ্গে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের মোট বাজার মূলধন কমেছে ৬৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। ডিএসই ও সিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা গেছে।

গত সপ্তাহের শুরুতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ০১ হাজার ৮২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন কমেছে ৪৮ হাজার ৭৫৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশের অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে গত সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৩৮ হাজার ১০০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২২ হাজার ৬৯০ কোটি ৮৭ লাখ টাকায়।

সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৫ হাজার ৪০৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের মোট বাজার মূলধন কমেছে ৬৪ হাজার ১৭৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আলোচিত সপ্তাহে ডিএসইতে ২ হাজার ৭০ কোটি ০২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৩ হাজার ৮২১ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এক সপ্তাহে ডিএসইতে গড় লেনদেন কমেছে ৩২ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সপ্তাহ শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ‘ডিএসইএক্স’ ২০৫ দশমিক ০২ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ৩১২ পয়েন্টে। সপ্তাহের শুরুতে সূচকটি ছিল ৫ হাজার ৫১৭ পয়েন্টে। প্রধান সূচকের সঙ্গে ‘ডিএসই এস’ সূচক ৫২ দশমিক ৬২ পয়েন্ট কমেছে। আর ‘ডিএস-৩০’ সূচক কমেছে ৬৬ দশমিক ২৯ পয়েন্ট।

আলোচিত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ২৮টির। আর ৩৩৮টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এ সময়ে ২০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আলোচ্য সপ্তাহে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং সিএসসিএক্স সূচক কমেছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সূচক অবস্থান করছে যথাক্রমে ১৫ হাজার ৪০৩ দশমিক ৩৭ ও ৯ হাজার ২৬৪ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে।

সপ্তাহ ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে ১৫৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। যা আগের সপ্তাহে ছিল ২১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৯টির, কমেছে ২৫২টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টি কোম্পানির শেয়ার দর।