পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে আসন্ন বাজেটে ডিএসইর ৫ প্রস্তাব
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে ৫টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা ক্লাবে ডিএসইর প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাবনারগুলো তুলে ধরেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের ওপর কেটে রাখা উৎসে কর চূড়ান্ত দায় হিসেবে নিষ্পত্তি, তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় কর কমানো, বন্ডের সুদজনিত আয়কে করমুক্ত রাখা এবং স্টক এক্সচেঞ্জে সিকিউরিটিজ লেনদেন হতে মূলধনী মুনাফার উপর নতুন করে কর আরোপ না করা। বাজেট প্রস্তাবনায় দেশের প্রধান এই স্টক এক্সচেঞ্জটি তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির কর হার কমিয়ে তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ১২.৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে এই কর হারের ব্যবধান সাড়ে ৭.৫ শতাংশ।
তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে কর্পোরেট করের হারের পার্থক্য ৭.৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ বা ১২.৫ শতাংশ এ উন্নীত করা উচিত হবে। এজন্য তালিকাভুক্ত পাবলিকলি ট্রেডেড কম্পানির কর হার হ্রাস এর পাশাপাশি নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ফলশ্রুতিতে, আরও বহুজাতিক এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছল স্থানীয় কোম্পানিগুলো এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এ ধরনের একটি নজিরবিহীন পদক্ষেপ সরকারি শেয়ার তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘদিনের লালিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের কর সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবদান প্রশংসনীয়। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম হওয়া সত্ত্বেও, আইনের যথাযথ আনুগত্য এবং প্রয়োগের কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রত্যক্ষ আয়কর বা রাজস্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যকর নির্দেশনা এবং স্টক এক্সচেঞ্জের নিবিড় পর্যবেক্ষণের অধীনে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার হ্রাস সত্ত্বেও কর্পোরেট আয়কর এর পরিমান আরও বৃদ্ধি পাবে। স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের মাধ্যমে পরিচালিত সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধ কালে ০.০৫ শতাংশ (যেখানে স্টক এক্সচেঞ্জের আয় ০.০২৫ শতাংশ অর্থাৎ এক্সচেঞ্জের আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ) হারে কর সংগ্রহ করে। এ করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
অতএব, আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম অনুশীলনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এ কর কর্তনের হার হ্রাস করা প্রয়োজন। লেনদেনের মূল্যের উপর উৎসে কর কর্তনের হার ০.০৫ শতাংশ হতে হ্রাস করে ০.০২০ শতাংশ করা যেতে পারে, যা ইতোপূর্বে ০.০১৫ শতাংশ ছিল। লভ্যাংশ আয়ের উপর উৎস করকে, সঞ্চয় পত্রের মুনাফার উপর উৎসে কর্তনকৃত কর এর ন্যায় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। করযোগ্য আয় গণনায় লভ্যাংশ আয়ের উপর প্রথম পঞ্চাশ হাজার টাকা কর ছাড় আয়কর আইন, ২০২৩-এ বাতিল করা হয়েছে কিন্তু এটি আটিও, ১৯৮৪-এর ষষ্ঠ তফসিল, পার্ট এ, প্যারা ১১এ- তে অনুমোদিত ছিল।
বর্তমান পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে, লভ্যাংশ আয়ের প্রথম ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ের বাইরে রাখা উচিত হবে। এটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সাহায্য করবে যা শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজারের সার্বিক লেনদেন বৃদ্ধি তথা কর রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।