প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না পুঁজিবাজার
মনিরুজ্জামান মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না পুঁজিবাজার। গত শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে বাজারেরর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। তাঁদের কাছে তিনি পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতনের কারণ জানতে চান। এরপর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে গত সোমবার বাজার কিছুটা ঘুরলেও সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। তবে লেনদেনের শুরুতে সূচকের বড় উত্থান হলেও দুপুর ১ টার পর সেল প্রেসার দিয়ে কারা পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করছে এ প্রশ্ন এখন খোদ বিনিয়োগকারীদের। তাছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ে একের পর গুজব সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল করছে একটি চক্র। মুলত বাজেটকে সামনে রেখে চক্রটি নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। সর্বশেষ গেইন ট্যাক্স বা মূলধনী মুনাফার ওপর করারোপ ইস্যু দেখিয়ে সক্রিয় হয়েছে কারসাজি চক্রটি।
এছাড়া পুঁজিবাজারে টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীরা বেশ হতাশ। হতাশার মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছেন না। অনেকেই বাধ্য হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। ফলে বাজার আরও খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো আশার বাণীও শোনা যাচ্ছে না। ফলে বাজার এখন বেশ আস্থার সংকটে। এ আস্থার সংকটের কারণেই প্রায় সব শেয়ারের দর পরেছে অস্বাভাবিকভাবে। পুঁজিবাজারে এখন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী লোকসানে আছেন। মৌলভিত্তিক শেয়ারে বিনিয়োগ করেও বড় লোকসানে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন পুঁজিবাজার ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও কারা বাজারকে অস্থির করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার খুঁেজ বের করা দরকার। তা না হলেও আরো বড় আস্থার সংকটে পড়বে বিনিয়োগকারীরা। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাজেট সমন্বয় মিটিং প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে পুঁজিবাজারকে কাজ লাগাতে ও গতিশীল পুঁজিবাজারে গঠনে কাজ করার নির্দেশ দেন। এমন বক্তব্যের পরও পুঁজিবাজারে দরপতনের কারন কী। এ প্রশ্ন এখন হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের।
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন পুঁজিবাজারকে আর পড়তে দেওয়া যাবে না, ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে একটা উপায় আছে। এ ক্ষেত্রে আইসিবিকে ক্রেতার ভূমিকায় নামতে হবে। আইসিবি শেয়ার ক্রয় শুরু করলে পতন থেমে যাবে। তবে সেখানেও সমস্যা সমস্যা আছে। আইসিবির হাতে এখন টাকা নেই। এ কারণে আইসিবিও এগিয়ে আসতে পারছে না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১.৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫২৭৮ পয়েন্টে। যা আগের দিন বেড়েছিল ৫৯.৬৬ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ডিএসইতে ৪৪০ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের দিন হয়েছিল ৫০৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ৬৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বা ১২.৯২ শতাংশ।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৪ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৯২ টি বা ২৩.৩৫ শতাংশের। আর দর কমেছে ২৬৫ টি বা ৬৭.২৫ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ৩৭ টি বা ৯.৩৯ শতাংশের।
অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএই) আজ লেনদেন হয়েছে ১৭০ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। এদিন সিএসইতে ২৪৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৯টির, কমেছে ১৩৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টি প্রতিষ্ঠানের। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এরমধ্যে দাম বেড়েছিল ১০০টির, কমেছিল ১১৮টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ১৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট।