পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ, স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের দাবী
মনিরুজ্জামান ও মিজানুর রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনে দেশের পুঁজিবাজার এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারীদের পুঁজি কমছে। তাদের লোকসান বাড়তে বাড়তে নিঃস্ব হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পতন ঠেকাতে নানা উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। তারল্য সংকট এবং নতুন বিনিয়োগের অভাবে বাজারে থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া নতুনদের আকৃষ্ট করতে না পারা এবং বাজারে সক্রিয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাবে সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
এদিকে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচকটি কমতে কমতে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে নেমে এসেছে। যা বাজারকে তিন বছর আগের অবস্থানে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাজার ছাড়ছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু কেন এই আস্থাহীনতা? এ অবস্থার পরিবর্তনে আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কী থাকা উচিত? বাজার সংশ্লিষ্টরা কী চান? যা পুঁজিবাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। আস্থা ফেরাবে বিনিয়োগকারীদের!
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সবচেয়ে যেটা জরুরি তা হলো পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা। কারণ পুঁজিবাজার ঠিক না করলে অর্থনীতিতে গতি ফেরানো কঠিন হবে। তারা বলেছেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো পুঁজিবাজার। সেখানে বড় বড় উদ্যোগের পুঁজি আসছে এ খাত থেকে। কিন্তু আমাদের দেশে উলটো। এখানে ব্যাংক থেকে সব অর্থায়ন করা হয়। পুঁজিবাজারকে যতদিন না অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে ততদিন এই বাজারের উন্নয়ন হবে না।
বাজার সংশ্লিষ্টরা আরো বলেছেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা যেমন ঠিক। একইভাবে সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি তা হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বাজার থেকে কারসাজি দূরকরণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, কারসাজি দূর না করলে কোনো উদ্যোগই সফল হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু এর মধ্যেও কারসাজি থেমে নেই। তাহলে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে কি করে? এখানে বন্ধ কোম্পানির শেয়ারের দরও হুহু করে বাড়ে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের তো এ বিষয় জানার কথা নয়। এসব বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আসন্ন বাজেটে মূলধনি মুনাফার (ক্যাপিটাল গেইন) ওপর করারোপের যে বিষয়টি শোনা যাচ্ছে তা যেন না হয়। কারণ, বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা সেখানে মূলধনই রক্ষা করা যাচ্ছে না। মূলধনি মুনাফার ওপর কীভাবে কর দেবে বিনিয়োগকারীরা?
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার জন্য আমরা এ খাতে অতিরিক্ত কোনো ধরনের করারোপ চাই না। সিকিউরিটিজ লেনদেনের মূল্য পরিশোধ কালে আমাদের ০.০৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। সেখানে এ করের হার আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে মাত্র ০.০২ শতাংশ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রেক হোল্ডার কোম্পানিগুলোর প্রধান রাজস্ব (অর্থাৎ টার্নওভার) কমিশন আয় থেকে এত বেশি হারে ট্যাক্স আরোপ করার ফলে ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দিনভর সূচকের উঠানামা করলেও দিনশেষে সামান্য সূচকের উত্থান হয়েছে। এদিন বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও টাকার পরিমাণে লেনদেন। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ১১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৪৭ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪২ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৫২ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৮১ টির, দর কমেছে ১৪৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৯ টির। ডিএসইতে ৫৯৩ কোটি ৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২০১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৯১ কোটি ৫৪ লাখ টাকার।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৯৭০ পয়েন্টে। সিএসইতে ২২১ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১০০ টির দর বেড়েছে, কমেছে ৮৭ টির এবং ৩৪ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।