ফরচুন সুজের ১৫০ টাকার শেয়ার এখন ৩৩.৮০ টাকা, সর্বশান্ত বিনিয়োগকারীরা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চামড়া খাতের কোম্পানি ফুরচুন সুজ লিমিটেডের শেয়ারে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা। গত দেড় বছরে বিনিয়োগকারীদের প্রতিটি শেয়ারে লোকসান হয়েছে ৭৭ টাকা। মুলত নানা গুজব ছড়িয়ে একটি চক্র শেয়ারটি নিয়ে কারসাজি করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করেছে। ঐ চক্রটি ফরচুন সুজের শেয়ার নিয়ে বাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে ৩০ টাকার শেয়ার ১৫০ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারদর বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে আসে।
পরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে ফরচুন মুজের শেয়ার কারসাজি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ফরচুন সুজের শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ফরচুন সুজের শেয়ার কারসাজিতে আবুল খায়ের হিরু, তার বাবা আবুল কালাম মাতবর, স্ত্রী কাহী সাদিয়া হাসান, বোন কনিকা আফরোজ, শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান ও তার কোম্পানি ডিআইটি কো-অপারেটিভ জড়িত থাকার অভিযোগ উছে। তারা ফরচুন সুজ কারসাজিতে রিয়েলাইজড ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা এবং আনরিয়েলাইজড ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা মুনাফা করেছে বলে ডিএসইর এক প্রতিবেদন সূত্র জানা যায়।
ডিএসই হিরু ও তার পরিবারের সম্পৃক্ততায় ওই কোম্পানি দুটির শেয়ার কারসাজিতে ৯৪.৬৭ শতাংশ দর বৃদ্ধি দেখতে পায়। যা ২০২১ সালের ২০ মে থেকে ১৭ জুন এক তদন্তে উঠে আসে। এরপর থেকে শেয়ারটি দর ধারাবাহিক দরপতন ঘটে। কারসাজি চত্রটি ফরচুন সুজের শেয়ার বড় বড় ব্লক মার্কেটে লেনদেন করে বেড়িয়ে যায়। যা ঐ সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাৎক্ষনিক কোন ভুমিকা নেয়নি। ফলে ফরচুন সুজের শেয়ারটিতে বিনিয়োগকারীরা বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়ে। গত দেড় বছরের মাথায় প্রতিটি শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে ৭৭ টাকা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তথ্যমতে, কোম্পানিটির শেয়ারদর গত ২০২২ সালের জুন মাসে ছিল ১১০ টাকা, যা গতকাল রোববার ৩৩ টাকা ৮০ পয়সায় নেমে আসে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমে ৭৭ টাকার বেশি। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমার এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৬ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৯ পয়সা আয় হয়েছিল। আর তিন প্রান্তিক (জুলাই ২৩-মার্চ ২৪) মিলিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা আয় হয়েছে।
গতবছর একই সময়ে ১ টাকা ২৩ পয়সা আয় হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি।
উল্লেখ্য, ঐ সময় ফুরচুন সুজের মালিক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির বিস্তর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। অভিযোগ রয়েছে শেয়ার কারসাজির টাকায় তিনি ক্রিকেটে বিনিয়োগ করেছিলেন। ঐ সময় কোটি টাকা খরচ করে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ক্রিকেট টুর্নামেন্টে।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের ঠকালেও বিলাসিতা বন্ধ নেই কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের। কোটি টাকায় নিয়েছেন বিপিএলের দল ফরচুন বরিশাল। ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মতে, বিপিএলে এমন একটি দল পরিচালনা করতে ন্যুনতম ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা খরচ হয় প্রতিটি দলের। এছাড়াও আরো অনেক বেশি খরচ করে দলগুলো।
দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া, ক্রিকেট সরঞ্জাম প্রদান, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনসহ আরো নানান খাতে প্রচুর খরচ হয় দলগুলোর। সে তুলনায় লাভ আসে না বললেই চলে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে যে টাকা পায় দলগুলো তা খরচের ১০ ভাগও না বলে মন্তব্য করেছেন বিসিবি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।