জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমি মারা যাব: প্রধানমন্ত্রী
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মারা যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন সেদিকে লক্ষ্য রাখতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বুধবার এসএসএফ’র ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে আয়োজিত দরবারে প্রদত্ত ভাষণে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কিন্তু আমাকে আর গুলি-বোমা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাব। কাজেই এরাই আমার প্রাণশক্তি। এটুকু মনে রাখতে হবে। গতকাল বুধবার এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত দরবারে বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, একটি বিষয় আমি নিশ্চয়ই বলব, আমরা রাজনীতি করি। আমার আর কোনো শক্তি নেই।
শক্তি একমাত্র জনগণ। জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি। কাজেই যাতে জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই, আমি জানি এটা কঠিন দায়িত্ব। তারপরও এই দিকেও নজর রাখতে হবে যে এই মানুষগুলোর জন্যই তো রাজনীতি করি। মানুষদের নিয়েই তো পথচলা। আর যাদের নিয়ে দেশের মানুষের কাজ করি তাদের থেকে যেন কোনোমতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই।
সরকার প্রধান জানান, এটা সবসময়ই এসএসএফের সদস্যদের তিনি বলেন এবং মাঝে মধ্যে রাগও করেন। কাজেই এই বিষয়গুলো একটু সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখা দরকার। কারণ, তিনি যখন সরকারে ছিলেন না এই দেশের মানুষ এবং দলীয় লোক, তারাই তার পাশে ছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, এই সাধারণ মানুষগুলোর জন্যই আমার রাজনীতি, এদের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জীবনমান উন্নত করাই আমার লক্ষ্য। তাই এই মানুষগুলোর কাছ থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হতে পারি না। কারণ, এরাই আমার চলার সব শক্তি জোগায়। এটা সবাইকে মনে রাখার জন্য অনুরোধ করছি। শেখ হাসিনা বলেন, এসএসএফের প্রতিটি সদস্য সার্বক্ষণিক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশংসনীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে আসছে এবং দেশে আসা বিদেশিরাও তাদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রশংসা করেছেন।
সরকারপ্রধান তার সরকারের বেকারত্বের হার তিন ভাগে নামিয়ে আনা, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামগঞ্জে হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ ও হতদরিদ্রদের সাহায্য দেওয়া, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘরবাড়ি দেওয়াসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে হতদরিদ্রের হার ২৫ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ৫ দশমিক ৬ ভাগে এবং দারিদ্রের হার ৪১ ভাগের বেশি থেকে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে আনার সাফল্য তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্রের হার ভবিষ্যতে আরও কমিয়ে আনার এবং অতিদারিদ্র একেবারে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা না এলে দারিদ্রের হার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ আমার নিঃশ্বাস আছে আমার এটাই চেষ্টা যে দেশের মানুষের জীবনকে যেন আরও উন্নতসমৃদ্ধ করে যেতে পারি। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও সেভাবেই চলতে হবে। যারা তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন তাদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আল্লাহ আমাকে হয়তো একটা কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন ততক্ষণ আমি বেঁচে থাকব। কিন্তু, আমার সঙ্গে যারা কাজ করে এবং যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাদের জন্য আমি চিন্তায় থাকি। কারণ, যতবার আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে প্রতিবারই আমার কিছু না কিছু নেতা-কর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। তারা ‘মানববর্ম’ রচনা করে আমাকে গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করেছেন। কাজেই এসএসএফ যেহেতু আমার সবচেয়ে কাছে থাকে, আমি সব সময় তাদের নিয়ে চিন্তিত। তিনি যখন নামাজ পড়েন তখন পরিবারের সদস্য, দেশবাসী ও তার আশপাশে যারা থাকেন এবং নিরাপত্তায় এসএসএফসহ যারা নিয়োজিত থাকেন তাদের জন্যও দোয়া করেন বলে জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।