গোল্ডেন হার্ভেস্টের ২২ কোটি টাকার এফডিআর তদন্তে বিএফআইইউ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২২ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) অপব্যবহার ও নিয়ম বহির্ভূত পরিচালনার বিষয়ে তদন্তে নামছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক চিঠির প্রেক্ষিতে বিএফআইইউ হিমায়িত খাদ্য ও আইসক্রিম পণ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠনটির বিরুদ্ধে তদন্তে নামছে।
২০১৯ সালে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য গোল্ডেন হারভেস্ট অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রাইট শেয়ার ইস্যু করার মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে প্রায় ৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এই তহবিল হতে একটি অংশ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে রাখে কোম্পানিটি।
বিএসইসি কর্মকর্তাদের মতে, রাইট শেয়ার তহবিল এফডিআরে রূপান্তর করা সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন। উপরন্তু, গোল্ডেন হার্ভেস্ট শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি না নিয়ে রাইট শেয়ারের টাকা এফডিআর হিসাবে ব্যবহারে করে আইন লঙ্ঘন করেছে। গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে বিএসইসি কোম্পানিটির এফডিআর তহবিলের সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিষয়টি তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিএফআইইউকে চিঠি দেয়।
গোল্ডেন হার্ভেস্ট কমিশনকে পর্যাপ্ত তথ্য না দেওয়ায় বিএসইসি এই বিষয়ে বিএফআইইউ-এর কাছে সহায়তা চেয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর আগে চলতি বছরের মার্চে বিএসইসি রাইট শেয়ারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ওই ৯০ কোটি টাকার ব্যবহারের বিষয়ে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করে।
চার বছর আগে তহবিল সংগ্রহ করা হলেও সংস্থাটি সেই অর্থ পুরোপুরি ব্যবহার করেনি।
চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত, কোম্পানিটি মাত্র ৭০ কোটি টাকা ব্যবহার করেছে। এ কারণে বিএসইসি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি কোম্পানিটির সম্পূর্ণ তহবিল ব্যবহার নিরীক্ষণ করবে এবং তালিকাভুক্তির পর থেকে সংশ্লিষ্ট পক্ষের লেনদেন তদন্ত করবে।
এই বিষয়ে কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, তহবিল ব্যবহারে বিলম্বের মূল কারণ ছিল মহামারী। এছাড়া, ডলার সংকট এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে যন্ত্রপাতি অধিগ্রহণের জন্য ক্রেডিট লেটার (এলসি) খুলতেও কোম্পানিটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। কোম্পানিটি যন্ত্রপাতির জন্য এলসি খুলতে এবং এর মাধ্যমে বাকি অর্থ ব্যবহার করতে এখন আরও সময় চায়।
এর আগে, বিএসইসি রাইট শেয়ার তহবিল ব্যবহার না করা সম্পর্কে কোম্পানিটির কাছে জানতে চেয়েছিল। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ব্রেইনট্রেন স্টুডিও লিমিটেড নামে এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানে কোম্পানিটি তহবিল বিনিয়োগ করেছে এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত অগ্রিম বরাদ্দ করেছে।
এরপর বিএসইসি জানতে পারে, একই ব্যক্তি গোল্ডেন হারভেস্ট এবং ব্রেনট্রেন স্টুডিও উভয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যা সিকিউরিটিজ আইনের পরিপন্থী। এছাড়া, কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডার অনুমোদন না নিয়ে এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে এই অর্থর লেনদেন করেছে।
২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে, কোম্পানিটি ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা খুব ভালো ছিল। ২০১১ সালে কোম্পানিটির রাজস্ব আদায় ছিল ৫২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং কর পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা গোল্ডেন হার্ভেস্টের ব্যবসার জন্য সেরা বছর হিসাবে চিহ্নিত। ২০১৮ সালে, কোম্পানিটি তার ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য রাইট শেয়ার ইস্যু করার জন্য আবেদন করে এবং অক্টোবর ২০১৯ সালে বিএসইসির অনুমোদন পায়। রাইট শেয়ার তহবিল পাওয়ার পর এর রাজস্ব এবং মুনাফায় পতন হয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানিটির রাজস্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায় এবং এটি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশিত রিটার্ন থেকে বঞ্চিত করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই থেকে মার্চ সময়ের মধ্যে, কোম্পানির রাজস্ব ছিল ৭০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর আর্থিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা এবং এর নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সর্বশেষ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের মাত্র ১ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে।