শহীদুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দিনভর সূচেেকর উঠানামা করলেও দিনশেষে সূচকের কিছুটা উত্থানে লেনদেন শেষ হয়েছে। মুলত দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে পুঁজিবাজারে। নিস্কিয় থাকা প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারে সক্রিয় হয়েছেন। ফলে প্রতিদিনই অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারের এই অবস্থাকে স্বাভাবিক বলছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

কারণ সূচকের টানা উত্থানের ফলে আস্থা ফিরতে শুরু করছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে। এছাড়া পুঁজিবাজারে দুর্দিন কাটিয়ে সুদিনে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যার ফলে ঈদের পর লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

অবশ্য ঈদের আগে তিন মাসের টানা দরপতনে ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখনো বড় ধরনের লোকসানের মধ্যেই আছেন। কয়েকটি কারণে ঈদের পর পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলছেন, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দুই কারণে বাজারে বড় উত্থান ও পতনের চিত্র দেখা গেছে। প্রথমত, তিন-চার দিন আগে যারা শেয়ার কিনেছিলেন, তারা অনকেই মুনাফায় ছিলেন। ফলে মুনাফা তোলার প্রবণতায় বাজার কিছুটা চাপে ছিলো। তবে দিনশেষে ক্রয়ের চাপে ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার।

দ্বিতীয়ত, বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার সংগ্রহ করতে মাঝে মধ্যেই পতনের শঙ্কা তৈরি করছে। যার কারণে হঠাৎ করে বাজার বড় পতনে টার্ন নিচ্ছে। আবার তাদের বাই প্রেসারে বাজারে আবার স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা না হলে এবং অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক সংবাদ না এলে ধীরে ধীরে বাজার শক্ত অবস্থানে চলে আসবে। অবশ্য ঈদের পর ঊর্ধ্বমুখী বাজারেও খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, এর আগেও কয়েক দফায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজার পতনের বৃত্তেই আটকে থেকেছে। ফলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে এ আশায় নিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করে আরও লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। ঈদের পর বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এখনো বড় লোকসানের মধ্যে আছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এখনো ৫০-৬০ শতাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩ মার্চ ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ছিল ৬ হাজার ২১৫ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এরপর শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে পড়লে ১১ জুন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমে যায়। আর বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ১৪৫ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন কমে ১ কোটি ২৬ হাজার ৩৬৯ টাকা।

ঈদের পর এখন পর্যন্ত লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই পুঁজিবাজারের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৫৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর বাজার মূলধন ৩৯ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ২০৯ কোটি টাকায়।

পুঁজিবাজারের চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি’ রোজারিও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন যে মুভমেন্ট হচ্ছে এর পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। দাম যেখানে নেমে আসছিল, সেখান থেকে অটোমেটিক্যালি বাউন্স ব্যাক করতোই, এটা স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু দুটি জিনিস বড় প্রভাব ফেলেছে। বাজারে টাকা আছে। যদি কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না হয়, তাহলে অটোমেটিক বাজার ভালো হয়ে যাবে। কারণ কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বিনিয়োগকারীরা চান না।

ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেকদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে যে দরপতন ছিল তখনই আমরা বলে এসেছি এটা অস্বাভাবিক একটা দরপতন। যেটার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছিল না এবং বাজার এমন জায়গায় চলে গেছে যেখান থেকে বাজার নিজেই ঘুরে দাঁড়াবে। এখন আমরা যেটা দেখছি বাজার তার নিজস্ব শক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ওঠা-নামার মাধ্যমেই একটা পর্যায়ে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৫ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক .৩১ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১ হাজার ২১৪ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে।

দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৪ টির, দর কমেছে ১৯৭ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩ টির। ডিএসইতে ৮৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২০ কোটি ২০ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯০৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ।

অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৭৯৪ পয়েন্টে। সিএসইতে ২৭৮ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১১০ টির এবং ২৪ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।