অনিশ্চিত পতনের গন্তব্যে ছুটছে দেশের পুঁজিবাজার, সূচক উধাও ১৪২ পয়েন্ট
শহীদুল ইসলাম ও মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট চলমান সহিংসতায় দেশের পুঁজিবাজারে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকে বাজারে টানা সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। ফলে টানা দরপতনে ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে। এদিন মূল্য সূচকের বড় পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনকৃত বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
গত তিন কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৪২ পয়েন্ট। ফলে সূচকের টানা দরপতনে অনিশ্চিত দরপতনের গন্তব্যের পথে হাঁটছে পুঁজিবাজার। যার ফলে চোখেমূখে অন্ধকার দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। নিয়মিত সিকিউরিটিজ শুন্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার পোর্টফোলিও। ফলে বর্তমান কমিশনের ব্যর্থতা ফুঁটে উঠছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যখনই দেশের পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর পথে অগ্রসর হয়, তখনই কোনো না কোনো ‘কালোমেঘ’ বাজারকে লন্ডভন্ড করে দেয়। এবারও তেমনি বিনিয়োগকারীরা যখন দীর্ঘদিন পর আশা-ভরসা নিয়ে এগুচ্ছিল, ঠিক তখনি কোটা আন্দোলনের সহিংসতা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নানা ইস্যুতে দর পতন ঠেকাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব শেয়ারের দরে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা দিয়ে রেখেছিল। চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে তা তুলে নেওয়ায় পরও টানা চার মাস দর পতন হয়েছে। মাঝে এক মাস ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখা গেছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘাত-সহিংসতায় নতুন করে উদ্বেগ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সহিংস আন্দোলন ঘিরে দেশে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা স্বাভাবিক নয়। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও, অনিশ্চয়তা আছে। মানুষ বোঝার চেষ্টা করছে, আগামীতে কী হতে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। অর্থনীতিই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে পুঁজিবাজার ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক সদস্য বলেন, বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে মুনাফা পাবার আশায়। লোকসান হলে বিনিয়োগ তুলে নেন। টানা চার মাসের দর পতনের পর প্রায় এক মাস দর পতনের ধারা বন্ধ ছিল। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন বিনিয়োগ আসবে না পুঁজিবাজারে।
জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৬৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৫১ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৮১ পয়েন্টে।
দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৭ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৫ টির, দর কমেছে ৩৪০ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২ টির। ডিএসইতে ৪৩২ কোটি ৬৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকার ।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে। সিএসইতে ১৯৪ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৫ টির এবং ২০ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।